দক্ষ কর্মী ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের হাইপ্রোফাইল সমর্থকদের মধ্যে বিভাজনের সুর

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৭
লরা লুমার ও ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষ প্রবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসতে উৎসাহিত করতে ভিসা কর্মসূচি নিয়ে অনলাইনে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাইপ্রোফাইল সমর্থকেরা। এই বিতর্ক ও বিভাজন আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনে সম্ভাব্য বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নির্বাচনী প্রচারণাকালে অত্যন্ত জনপ্রিয় বক্তা হয়ে ওঠেন বিবেক রামাস্বামী। ট্রাম্প তাঁকে সরকারি ব্যয় কমানোর দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন। বিবেক দাবি করেছেন, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার প্রবণতার জন্য মার্কিন সংস্কৃতিই দায়ী। সাধারণত এইচ–১বি অস্থায়ী কর্মী ভিসার মাধ্যমে তারা বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে।

বিবেক এক দীর্ঘ এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘আমাদের আমেরিকান সংস্কৃতি মধ্যম মানকে উৎকর্ষে টেনে তুলে দেখায়।’ তিনি যুক্তি দিয়েছেন, বিদেশি কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে উন্নত করে।

পোস্টটি ট্রাম্প সমর্থকদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই সমর্থকেরা যেকোনো ধরনের অভিবাসনের বিরোধিতা করেন। ফলে বিবেককে পরে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করে আবার পোস্ট দিতে হয়েছে।

মার্কিন সংস্কৃতির সমালোচনা করে বিবেক মূলত লিখেছিলেন, ‘একটি সংস্কৃতি যেখানে প্রম কুইনকে গণিত অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়নের ওপরে উঠিয়ে উদ্‌যাপন করে, অথবা খেলোয়াড়কে শ্রেণির সেরা শিক্ষার্থীর ওপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়, এই সংস্কৃতি সেরা প্রকৌশলী তৈরি করবে না।’

অভিবাসী বিরোধী ট্রাম্প সমর্থকেরা এমন মন্তব্য নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। অনলাইনে নিন্দার ঝড় ওঠে। এরপর বিবেক এক্স–এ পোস্ট করেন, তিনি বিশ্বাস করেন, এইচ–১বি ব্যবস্থাটি মারাত্মকভাবে ভঙ্গুর। এটি প্রতিস্থাপন করা উচিত।

বড় দিনের ছুটির এই সময়ে মূলধারার রিপাবলিকান এবং চরম ডানপন্থী প্রভাবশালীরা বিবেক এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ধনী ব্যক্তিদের সমালোচনা করে অনলাইনে একটি বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য ট্রাম্প সমর্থক স্টিভ ব্যানন গতকাল শুক্রবার তাঁর ওয়ার রুম পডকাস্টে বলেছেন, ‘যদি আমাদের ঝগড়া করতে হয়, তবে এখনই করি।’ তিনি রিপাবলিকানদের এইচ-১বি প্রোগ্রামের সমর্থনকে ‘পুরোপুরি প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেন।

অবশ্য দক্ষ কর্মী ভিসা সম্পর্কে বিবেকের ধারণাকে সমর্থন করেছেন প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক। তিনি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ সহ–পরিচালনা করার জন্য মনোনীত হয়েছেন।

ইলন মাস্ক এইচ–১বি ভিসা প্রোগ্রামকে ‘শীর্ষ প্রায় শূন্য দশমিক ১ শতাংশ প্রকৌশলী প্রতিভা’ আকর্ষণকারী হিসেবে দেখেন।

এক্সে মাস্ক লিখেছেন, ‘আমেরিকাকে এমন একটি পেশাদার ক্রীড়া দলের মতো ভাবা, যা দীর্ঘদিন ধরে জিতছে এবং জিততে থাকবে—এটিই সঠিক মানসিক গঠন।’

তবে অনলাইনে সমালোচকেরা মাস্কের কোম্পানিতে এইচ–১বি ভিসায় নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের স্ক্রিনশট পোস্ট করে খোঁচা দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের কর্মীদের বেতন বাৎসরিক ২ লাখ ডলার বা তারও কম। সমালোচকেরা যুক্তি দেন, এই নিয়োগগুলো কোনো অভিজাত প্রতিভা গোষ্ঠী নয়, বরং মার্কিন কর্মীদের বেতন কমিয়ে রাখার একটি ফন্দি।

জাতিসংঘে ট্রাম্পের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং প্রাক্তন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিকি হ্যালি অভিবাসন কর্মসূচির পক্ষে থাকা প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘আমেরিকান কর্মী বা আমেরিকান সংস্কৃতির মধ্যে কোনো ভুল নেই। আপনি শুধু সীমান্তে তাকালেই বুঝতে পারবেন, কতজন আমাদের যা আছে তা চায়। আমাদের বিদেশি কর্মীদের চেয়ে আমেরিকানদের মধ্যে বিনিয়োগ করা এবং তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’

এদিকে ডানপন্থী অনলাইন ইনফ্লয়েন্সার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোর সমর্থক লরা লুমার অভিবাসী কর্মী ভিসা নিয়ে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেছেন। লরা লুমারের এই মাস্ক–বিরোধিতার মূলে রয়েছে মূলত তাঁর তীব্র অভিবাসন–বিরোধী মতামত এবং বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব। তিনি ইলন মাস্ককে চীনের ঘুঁটি বলে অভিহিত করেছেন, সেই সঙ্গে ভারতের অভিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছেন লুমার।