Ajker Patrika
হোম > বিশ্ব > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

ট্রাম্পকে বাদ দিয়ে মাস্ককে কেন ‘প্রেসিডেন্ট’ বলছেন ডেমোক্র্যাটরা

অনলাইন ডেস্ক    

ট্রাম্পকে বাদ দিয়ে মাস্ককে কেন ‘প্রেসিডেন্ট’ বলছেন ডেমোক্র্যাটরা
ইলন মাস্ক। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে, বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হয়েছেন টেসলা-স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। তাঁর প্রভাব ডেমোক্র্যাটদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যার ফলে তারা ক্রমবর্ধমান হতাশা নিয়ে তাঁকে ব্যঙ্গ করে ‘প্রেসিডেন্ট মাস্ক’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন।

ইলন মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাবের উত্থান শুরু হয় মূলত তাঁকে যখন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নবগঠিত সরকারি কার্যকারিতা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এই পদক্ষেপ ইলন মাস্কের বিশাল ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা সদ্ব্যবহারের একটি উপায় হিসেবে দেখছেন অনেকে। তবে এটি কিছুটা অবাক করার মতোও ছিল। দুটি বড় কোম্পানির সিইও হিসেবে—যা মূলত সরকারি চুক্তির ওপর নির্ভরশীল—সরকারের নীতি নির্ধারক হিসেবে মাস্কের অবস্থানকে অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন

সম্প্রতি একটি বাইপার্টিসান বা দ্বিদলীয় বাজেট চুক্তির বিরোধিতা করেন মাস্ক। অনেকে মনে করেন, এটি ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তিনি। মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ওই বিলটিকে ‘অপরাধমূলক’ বলে মন্তব্য করেন এবং রিপাবলিকানদের এই বিলটি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান। সরকারি ব্যাপারে এমন প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ তাঁকে আরও ক্ষমতাশালী হিসেবে ভাবতে বাধ্য করছে অনেককেই।

বিশেষত ডেমোক্র্যাটরা মাস্কের ক্রমেই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য জিম ম্যাকগভার্ন মজার ছলে বলেছেন, ‘অন্তত আমরা জানি যে, কে দায়িত্বে আছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট এবং ট্রাম্প এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট।’ একইভাবে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রবার্ট গারসিয়া এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘ইলন মাস্কের প্রেসিডেন্সিতে স্বাগতম।’

এই ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যগুলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে একটি বাড়তে থাকা এই ধারণাকেই তুলে ধরে যে, তারা মনে করছেন—ইলন মাস্কের প্রভাব প্রচলিত ক্ষমতার ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মাস্কের প্রভাব শুধু কথায় নয়, বরং কাজেও। রিপাবলিকান নীতির ওপর, বিশেষ করে ব্যয় কাটছাঁট এবং বাজেট বিষয়ে তাঁর সরাসরি প্রভাব অনেককেই অস্বস্তিতে ফেলেছে।

হাউস ডেমোক্রেটিক হুইপ ক্যাথরিন ক্লার্ক এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার আবারও আমরা বিশৃঙ্খলায় আছি...কিন্তু কেন? কারণ ইলন মাস্ক, এক অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তি, বললেন, “আমরা এই চুক্তি করব না” এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটা অনুসরণ করলেন।’

এদিকে, কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এমন ধারণাও পোষণ করেছেন যে, ইলন মাস্ক রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে তিনি হাউস স্পিকার হিসেবে অথবা অন্য কোনো প্রভাবশালী পদে। প্রতিনিধি ড্যান বিশপ এক্সে লেখেন, ‘পাঁচ বছর ধরে কংগ্রেসে আছি, আমি একটি মৌলিক পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এটি এসে গেছে।’

ইলন মাস্কের বাড়ন্ত প্রভাবের কারণে তাঁকে নিয়ে বেশ ব্যঙ্গচিত্রও তৈরি হয়েছে, যেখানে তাঁকে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি মার্ক পোকান এআই দিয়ে তৈরি করা একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে ইলন মাস্ককে হোয়াইট হাউসের প্রধান চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি টুইটে লেখেন, ‘আমরা সদ্য ভবিষ্যৎ থেকে ফিরে এসেছি এবং সেখানে ইলন মাস্কের শপথগ্রহণের ছবি পেলাম।’

ইলন মাস্কের রিপাবলিকান পার্টির ওপর প্রভাব নিয়ে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন তৈরি করেছে। যদিও অনেক রিপাবলিকান, যেমন ক্রিস প্যাক স্বীকার করেছেন, ইলন মাস্ক একটি শক্তিশালী চরিত্র। তবে কিছু রিপাবলিকান নেতা তাঁর হস্তক্ষেপ নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন। প্রতিনিধি গ্লেন থম্পসন এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি দেখলাম না যে, মাস্কের ভোটার কার্ড আছে। আমি নিশ্চিত নই যে, তিনি এখনকার সাধারণ মানুষের অবস্থা বুঝতে পারছেন কি না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে মাস্কের ব্যাপক অনুদান এবং ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে তাঁর উপস্থিতি সরকার ও মার্কিন ধনকুবেরদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিলিয়নিয়ারদের আমাদের সরকার পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত নয়।’

এই অবস্থায় অনেকেই প্রশ্ন করছে, ভবিষ্যতে আমেরিকার রাজনীতিতে ইলন মাস্কের ভূমিকা কী হবে? তিনি কি ব্যয় কাটছাঁটের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকবেন এবং রিপাবলিকান নীতিতে প্রভাব ফেলবেন? ইলন মাস্ক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক আরও গভীর হবে? এবং ডেমোক্র্যাটরা এই বাড়ন্ত ক্ষমতার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন তাই এখন বড় প্রশ্ন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা করে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

ট্রাম্প-জেলেনস্কির তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার সূত্রপাত যেভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়ও জমি কিনেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী, হতে পারে মামলা

হোয়াইট হাউসে বাগ্‌বিতণ্ডার পর বেরিয়েই ট্রাম্পের সহায়তা চাইলেন জেলেনস্কি

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

হ্যান্ডশেকের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক

কী হবে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে, অধীর অপেক্ষায় কিয়েভের মানুষ

চীনের ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

খনিজ চুক্তির বৈঠকের আগে জেলেনস্কির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

বাণিজ্য চুক্তিতে এলে শুল্ক ছাড় পেতে পারে যুক্তরাজ্য: ট্রাম্প