যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে ‘একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি’ আছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে ওয়াশিংটন যে সাহায্য দিয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করাই তাঁর উদ্দেশ্য। তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার ম্যারিল্যান্ডের অক্সন হিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) এই অবস্থান ব্যক্ত করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘ইউরোপ (ইউক্রেনকে) ১০০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার, কারণ আমাদের এক নির্বোধ, অদক্ষ প্রেসিডেন্ট এবং প্রশাসন ছিল।’ মূলত তাঁর পূর্বসূরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি চাই তারা (ইউক্রেন) আমাদের কিছু দিক, সেই বিপুল অর্থের বিনিময়ে যা আমরা তাদের দিয়েছি। তাই আমরা বিরল খনিজ এবং তেল চাচ্ছি। অথবা তারা আমাদের এমন কিছু দিক যা আমরা পেতে চাই।’
ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ব্যয় করা অর্থ ফেরত আনব। আমরা আমাদের অর্থ ফেরত আনব, কারণ এটা ন্যায্য নয়। এটা একদমই ঠিক না। আমরা দেখব কী হয়। তবে আমি মনে করি, আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি এবং আমাদের চুক্তির কাছাকাছি থাকাটাই উচিত।’
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের বোঝা কেবল যুক্তরাষ্ট্রকে বহন করা উচিত নয়। তাঁর মতে, ‘এটি (ইউক্রেন যুদ্ধ) ইউরোপকে প্রভাবিত করে, আমাদের আসলে তেমন প্রভাবিত করে না। ইউরোপের উচিত আমাদের চেয়ে বেশি অর্থ জোগান দেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ইউরোপ এরই মধ্যে তাদের অর্থ ফেরত পেয়েছে ‘ঋণের মাধ্যমে’, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কিছুই পায়নি।
মার্কিন সংস্থা ইন্টারএজেন্সি ওভারসাইট গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মার্কিন কংগ্রেস ইউক্রেনের জন্য প্রায় ১৮৩ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে। ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। এ সময় তিনি ইউক্রেন পরিস্থিতিকে ‘ভয়ংকর’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যুদ্ধের সমাধান করতে চাই এবং আমি চাই এই প্রাণহানি বন্ধ হোক। ‘আমি (রাশিয়ার) প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমি মনে করি, এই যুদ্ধ শেষ হওয়া উচিত, অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত। আমি (ইউক্রেনের) প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলছি, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও কথা বলছি।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এল এমন এক সময়ে যখন ইউক্রেন একটি সংশোধিত মার্কিন প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এই প্রস্তাব অনুসারে ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মার্কিন প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তবে এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা সেই প্রস্তাবে দেওয়া হয়নি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রস্তাব অনুসারে, ইউক্রেনকে দেশটির খনিজ, গ্যাস, তেল এবং অবকাঠামো থেকে অর্জিত আয়ের অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দিতে হবে। এর আগে কিয়েভ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ এতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছিল না।
গত সপ্তাহে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ ইউক্রেনকে পুনরায় বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই প্রস্তাব ‘ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’, যা ইউক্রেনের অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ এনে দিতে পারে।