কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে বাংলাদেশের অনুরোধ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে ভারত। এখন তারা পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। এই পর্যালোচনার দুটি দিক আছে।
একটি হলো, চুক্তির আওতায় একজন ব্যক্তিকে ফেরত দেওয়া। অন্যদিক হলো, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। এখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রসঙ্গটি আসছে। কারণ, যাকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে, সেই ব্যক্তি শেখ হাসিনা। কাজেই ভারত তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও আইনি প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি জানতে চাইবে বাংলাদেশের কাছে। এটাই স্বাভাবিক।
আর ভারত যদি মনে করে, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না; তাহলে তারা চুক্তির একটি অনুচ্ছেদ [৬] ব্যবহার করতে পারে। যাঁকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক ধরনের, এমনটা মনে হলে এই অনুচ্ছেদ ফেরত দেওয়ার অনুরোধ নাকচের জন্য ব্যবহার করার সুযোগ আছে।
অন্য একটি অনুচ্ছেদে [৮] যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি নিজেই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে তাঁকে ফেরত না পাঠাতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে [এ ক্ষেত্রে ভারত] অনুরোধ করতে পারেন।
যদি এ দুটি অনুচ্ছেদের যেকোনোটি প্রয়োগ করে শেখ হাসিনাকে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়বে। এমন ক্ষেত্রে ভারত নিশ্চয়ই তাঁকে ফেরত না দেওয়ার রাজনৈতিক কী মূল্য হতে পারে, তা বিবেচনায় নেবে। এ ক্ষেত্রে তিব্বতের নেতা দালাই লামার বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে। দালাই লামার ভারতে অবস্থান বহু বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যতম ইস্যু হিসেবে বিরাজ করছে।
আরেকটি দিক আছে শেখ হাসিনা ইস্যুতে। তাঁকে নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দর-কষাকষি হতে পারে। এটা এমন হতে পারে যে তিনি ভারতে থাকুন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি কথা বলবেন না।
সব মিলিয়ে আমার ধারণা, চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত পাওয়া কঠিন বিষয়। প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। কারণ, তাঁকে ফেরত দিলে আশপাশের দেশে নিজের মিত্রদের কাছে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
এমন জটিল পরিস্থিতিতে যে পক্ষ যে অবস্থানই নিক না কেন, পুরো বিষয়টিতে অনেক সময় লাগবে।
এম হুমায়ুন কবির, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট