আজকের পত্রিকা: করোনাকালে কেমন ছিল আপনাদের রপ্তানি?
ড. এম কামরুজ্জামান কায়সার: করোনার আক্রমণের পর আমরা খুব রপ্তানি নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। আমাদের শঙ্কা ছিল, পাইপলাইনের অর্ডার, কাঁচামাল তথা সাপ্লাই চেইন নিয়ে। ওই সময়ে জার্মানির একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আকস্মিকভাবে আমাদের থেকে পোশাক নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর০ উল্টোচিত্রও ছিল। যেমন আমাদের সুইডিস ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম করোনাকালেও আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিল। প্রথম প্রান্তিকে যে হোঁচট খেয়েছিলাম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে এসে আশার আলো দেখলাম। আমাদের অর্ডারের ধারাবাহিকতা ফিরতে শুরু করল।
আজকের পত্রিকা: নিট পোশাকের অবস্থা কেমন? কেন বাংলাদেশে অর্ডার আসছে?
কামরুজ্জামান: আমরা পোশাক রপ্তানিতে টিকে আছি মূলত শ্রমনির্ভরতার কারণে। এখনো আমাদের বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। রপ্তানিমুখী পোশাকের কয়েকটি খাতের মধ্যে ওভেন, ডেনিমের তুলনায় নিট পোশাক অপেক্ষাকৃত স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ খাতের ৯০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল আমরা নিজেদের উৎস থেকেই সংগ্রহ করতে পারছি। এ ক্ষেত্রে আমরা একটু ভালো অবস্থায় আছি। বেসিক আইটেম তৈরির জন্য বাংলাদেশের একটা সুনামও তৈরি হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না, কীভাবে পোষাচ্ছেন?
কামরুজ্জামান: ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়ায়নি বরং আরও কমানোর জন্য দর-কষাকষি করে। তাদের যুক্তি হলো, অর্ডারের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়েছে, এখন আমরা যেন দক্ষতা বাড়িয়ে খরচটা কমিয়ে রাখি। এটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই অগত্যা আমরা এখন দক্ষতা বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছি। এখন আমাদের দক্ষতা দ্বিগুণে উন্নীত করেছি। এদিক থেকে আমরা এগিয়ে আছি।
আজকের পত্রিকা: খরচ বাড়ায় উৎপাদনে কী প্রভাব পড়ছে? নতুন বাজার বাড়ানোর উপায় কী?
কামরুজ্জামান: ক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছে না, আবার আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকও সম্প্রতি একটি রিপোর্ট দিয়েছে যে খরচের দিক থেকে আমরা এখন অনেক ওপরের দিকে। এভাবে খরচ বাড়তে থাকলে, আয় না বাড়লে বা কমলে আমাদের স্প্রেডও কমে আসবে। একসময় আমরা হয়তো আর পারব না। এ আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের সেমি ভ্যালু অ্যাডেড, ফেন্সি আইটেমে যেতে হবে। পাশাপাশি নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সোর্সিং বাড়াতে হবে এবং মেড ইন বাংলাদেশকে আরও প্রচার ও প্রসার করতে হবে। এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বাজারও ধরতে হবে। মিশনগুলোকে কাজে লাগিয়ে দাম, সময়সহ সার্বিক দিক থেকে আমরা যে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে, এটা সবাইকে বোঝাতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ন্যায্য দাম পেতে আপনাদের সংগঠন কী ভূমিকা রাখছে?
কামরুজ্জামান: সংগঠনের মাধ্যমে আমরা একটা ছাতার নিচে আছি এবং সংগঠন আমাদের নানা রকম সাংগঠনিক সহায়তা দিচ্ছে। তবে মূল যে সহায়তা ফেয়ার প্রাইস বা সিন্ডিকেটেড প্রাইস—এর পেছনে সংগঠনের কোনো ভূমিকা নেই। অথচ চীনে কিন্তু এটা আছে। এর মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্দিষ্ট করা থাকবে। একটা বেইজ প্রাইস থাকবে, এর কমে কেউ বিক্রি করতে পারবে না। আমরা এখানে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করি।
আজকের পত্রিকা: আমদানি-রপ্তানিতে আর কী কারণে খরচ বাড়ছে?
কামরুজ্জামান: কোভিডের প্রথম পর্যায়ের পর থেকেই জাহাজ ও কনটেইনার সংকটে আমদানি-রপ্তানির খরচ বেড়েছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবেই হয়েছে। আগে যেখানে কনটেইনার ভাড়া দুই বা আড়াই হাজার ডলার ছিল, সেটা বেড়ে হয়েছে ১৩ বা ১৪ হাজার ডলার। বায়াররাও বিষয়টি বুঝেছে যে এটা বৈশ্বিক সমস্যা। রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির সময়ও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কারণ, আমাদেরও চীন বা অন্য দেশ থেকে কাঁচামাল আনতে হয়। সুতার দাম বেড়েছে। এখন ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: আপনি জুট গুডসও রপ্তানি করেন। এ বাজারের কী অবস্থা?
কামরুজ্জামান: পরিবেশবান্ধব জুট গুডস এখন ইনডোর ফ্যাশন আইটেম হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর ফলে ইউরোপ-আমেরিকায় জুট গুডসের বাজার বড় হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের তৈরি বিচ ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, পটেটো ব্যাগ ইত্যাদির চাহিদা বেড়েছে। দেশে আবারও পাটের স্বর্ণযুগ ফিরছে। চাষিরা পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন। পাটের পাশাপাশি হোগলা, গোলপাতা, সিগ্রাস—এসব দিয়ে ব্যাগ বা হ্যান্ডক্রাফটস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস তৈরি হচ্ছে। আমরা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ৭০ হাজার হ্যাঙ্গিং বাস্কেট সম্প্রতি ডেনমার্কে রপ্তানি করেছি।