ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
প্রশ্ন: বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারকা হোটেলগুলো কেমন সাড়া পাচ্ছে?
উত্তর: আমাদের যখন সরকার পরিবর্তন হলো তখন অকুপেন্সি ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এখন অকুপেন্সি কিছুটা বাড়ছে। তবে তা আশানুরূপ নয়। শুধু ইউএস অ্যাম্বাসি তাদের রেসট্রিকশন শিথিল করেছে। বাকিরা হয়তো ধীরে ধীরে তুলে নেবে। তবে যারা ক্রু বেইজ হোটেল নয়, তারা খুব সাফার করছে। প্রতিটি হোটেল লস করছে।
প্রশ্ন: ভ্যাট-ট্যাক্সের ইস্যুর কোন বিষয়টি নিয়ে আপনারা বর্তমানে সাফার করছেন?
উত্তর: সরকার ভ্যাট ইমপ্লিমেন্টেশন যেভাবে করেছে, সেখানে তিনভাবে ভ্যাট দিতে হয়। ইমপোর্টের সময়, বিক্রির সময় ভ্যাট, অ্যালকোহল আর ডেইরি প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে এসডি দিতে হয় ২০ শতাংশ। সুতরাং এই প্রোডাক্টে এসডি যোগ করার পর সেটা আবারও হয়ে যায় ৫০ শতাংশের ওপরে, ৬২ শতাংশের মতো। তখন এটা নাগালের বাইরে চলে যায়। এখনো এটা এই অবস্থাতেই আছে। সব দিয়ে মালিকদের টিকে থাকা অনেক কঠিন। ব্যাংক লোনও দিতে হয়। ছাঁটাই করতে চাইলে আনইমপ্লয়মেন্টের সংখ্যা বাড়বে। অন্তত স্যালারি ও অপারেশনাল কস্টের জন্য হেল্প দরকার। এর ফলে প্রতিষ্ঠান বাঁচবে, ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়বে। আমরা ৬০ কোটি টাকার ওপরে ভ্যাট দিয়েছি গত বছর। আমাদের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণে ওপেন করতে পারছি না। সরকার আমাদের লাইসেন্সটা ঠিক সময়ে দিয়ে দিলে রেমিট্যান্স ঠিকমতো আদায় করতে পারব। সে ক্ষেত্রে সরকারের লাভ হবে, আরও এমপ্লয়মেন্ট হবে। ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। একজন বিদেশি পর্যটক বা বিজনেসম্যান যখন দেশে আসেন, তখন সঙ্গে ডলার নিয়ে আসেন। তাঁরা বাংলাদেশি টাকায় পে করলেও তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশে ট্রান্সফার হলেও ডলার হয়েই ঢোকে। ডলারের সংকট সমাধান হতে পারে যদি বড় বড় হোটেলে বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা বাড়ে।
প্রশ্ন: হোটেলগুলোতে দেখা যায় দক্ষ লোকবলের অভাব। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: আমাদের এই দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। আমরা অনেকে নন-স্কিলড সাবজেক্টে লেখাপড়া করি। সেটার মাধ্যমে আমরা যে ভালো জায়গায় যেতে পারি, সেই জায়গাটা অনেক ছোট। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিষয়ে পড়ালেও সে হারে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে না, যা হচ্ছে তা এন্ট্রি লেভেলে। এরা মিড লেভেলে যেতে পারে না। একজন কম জানা লোককে কোনো ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায় না। কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজনের এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা দরকার আরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শতাংশ ছেলেমেয়েও এখানে আসে না। কারণ, তারা জানেই না এর ভবিষ্যৎ কী। যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ান, তাঁদের ফিল্ড এক্সপেরিয়েন্স অনেক কম।
প্রশ্ন: সেপ্টেম্বর থেকে ট্যুরিজম সিজন শুরু হয়েছে। অনেক বিদেশি আসবেন, অনেকে আবার বাইরেও যাবেন। তাঁদের জন্য আপনাদের তারকা হোটেলের আলাদা কী সুযোগ থাকছে?
উত্তর: আমরা অফার দিচ্ছি। দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। বিদেশিরা এখনো খুব একটা আসছেন না। কারণ, দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তাঁরা ভরসা পাচ্ছেন না। আর দেশীয় পর্যটকেরাও বাইরে যাচ্ছেন না। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সমস্যাও মিটছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতক্ষণ নিয়ন্ত্রণে না আসছে, ততক্ষণ ট্যুরিজম এক্সপোজার হবে না এবং বিদেশি ট্যুরিস্ট আসবেন না। ব্যবসার সময় মূলত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর হলেও এ বছর মনে হয় না বিদেশিরা সে রকম আসবেন। ডোমেস্টিক ট্যুরিজম বাড়বে বলেও মনে হয় না। কারণ, আইনশৃঙ্খলায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তাতে মানুষ ভরসা পাচ্ছে না। হয়তো সেটি এ বছরেই শেষ হবে। কিন্তু এ বছরটা কঠিন।