রমজানের রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। ইসলামের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ ও শরিয়ত নির্ধারিত বিধি-নিষেধ থেকে নিয়ত সহকারে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলা হয়। রোজা পালনকালে রোজাদারকে সংযম প্রদর্শন করতে হয় এবং বিভিন্ন কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। নিচে রোজা ভঙ্গের কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।
রোজা ভঙ্গের প্রধান তিন কারণ হলো—
১. কোনো কিছু খাওয়া
২. কোনো কিছু পান করা
৩. স্ত্রী সহবাস করা।
তবে এ ছাড়াও কিছু কারণে রোজা ভেঙে যায়। যেগুলো জেনে রাখা প্রত্যেক রোজাদারের জন্য জরুরি। নিচে সেসব কারণ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো—
৪. ভুলে খাওয়া বা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা। (ফাতাওয়া শামি: ৩ / ৩৭৫)
৫. বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকা সেবন করা। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: ১ / ৩৭৮)
৬. কাঁচা চাল, আটার খামির বা একত্রে অনেক লবণ খাওয়া। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা,১ / ১৯৯)
৭. এমন কোনো বস্তু খাওয়া, যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা: ১ / ২০২; জাওয়াহিরুল ফিকাহ: ১ / ৩৭৮)
৮. পাথর, কাদামাটি, কঙ্কর, তুলা-সুতা, তৃণলতা, খড়কুটো ও কাগজ গিলে ফেলা। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা: ১ / ২০৩)
৯. নিজের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা: ১ / ২০২)
১০. ভুলে স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস সম্পর্ক করা। (ফাতাওয়া শামি: ৩ / ৩৭৫)
১১. কানে বা নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল ওষুধ দেওয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২ / ১২৭)
১২. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালিতে চলে যায়। (ফাতাওয়া শামি: ৩ / ৩৬৭)
১৩. মুখে পান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক করা। (ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২ / ১৭২)
১৪. হস্ত মৈথুন করা। (ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ: ৬ / ৪১৭)
১৫. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি করা কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে পানি চলে যাওয়া। (আহসানুল ফাতাওয়া: ৪ / ৪২৯)
১৬. কাউকে জোর-জবরদস্তি করে পানাহার করানো। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা: ১ / ২০২)
১৭. রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরি খাওয়া। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: ১ / ৩৭৮)
১৮. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। (ফাতহুল কাদির: ২ / ৩৩৭)
১৯. সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ভুলে দিনে ইফতার করা। (বুখারি, হাদিস: ১৯৫৯)
২০. যদি কেউ রাত ধারণা করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায়, এর পর সুবহে সাদিকের কথা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সহবাস থেকে বিরত হয়ে যায়। (ফাতওয়া শামি: ৩ / ৩৭৪)
২১. বৃষ্টি বা বরফের টুকরো খাদ্যনালির ভেতরে চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা: ১ / ২০৩)