হোম > ইসলাম

আজকের তারাবি: আসহাবে কাহফের ৩০৯ বছরের বিস্ময়কর ঘুম

রায়হান রাশেদ

আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের ১৫ তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা ইসরা ও সুরা কাহফের ১ থেকে ৭৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। এই অংশে নবী (সা.)-এর মেরাজ, আল্লাহ ও বান্দার হক, মা-বাবার প্রতি সদাচার, আসহাবে কাহফের ঘটনা, কোরআনের বৈশিষ্ট্য, মিতব্যয়িতা ও ব্যভিচারের শাস্তিসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো—

নবীজির মেরাজের বয়ান সুরা ইসরা
সুরা ইসরা মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১১। পবিত্র কোরআনের ১৭ তম সুরা এটি। ইসরা অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। নবীজির মেরাজ রাতে হয়েছিল, তাই এটিকে ইসরা বলা হয়। বিশেষত বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়। এই সুরায় এ ঘটনার ইঙ্গিত আছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এ সুরাকে ইসরা বলা হয়। এ সুরায় বনি ইসরাইলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ থাকায় সুরা বনি ইসরাইলও বলা হয়। 

মহানবী (সা.)-এর বিস্ময়কর ঊর্ধ্বজগৎ ভ্রমণ 
নবীজির বয়স তখন ৫১ বছর। নবুওয়াতের ১১ তম বছরের ২৭ রজব। তখনো তিনি মক্কায়। রাতের বেলা শুয়ে আছেন। জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) তাঁর কাছে এলেন। এর মধ্যে জমজমের পানি দিয়ে তাঁর বুক চিড়ে পবিত্র করা হলো। জিবরাইল-মিকাইল তাঁকে নিয়ে চললেন মেরাজের পথে। মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। নবীজি সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় জিবরাইল ও মিকাইলের (আ.) সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকে করে রাতে ভ্রমণ করেন। তিনি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় যান। সেখানে তিনি সব নবী-রাসুলকে নিয়ে দুই রাকাত নামাজে ইমামতি করেন। জিবরাইল তাঁর সামনে দুধ ও শরাবের পেয়ালা ধরলে তিনি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করেন।

এরপর তিনি প্রথম আসমানে গমন করেন। ধারাবাহিকভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। সেখানে আসমানের ফেরেশতারা তাঁকে সম্ভাষণ জানান। সাত আসমানে সাতজন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। পরে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ করে মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। পাশাপাশি জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। উম্মতের জন্য নিয়ে আসেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। 

নবী (সা.)-এর ইসরা ও মেরাজের কথা কাফেররা শুনে উপহাস করতে লাগল। নবীজির কাছে বায়তুল মুকাদ্দাসের বিবরণ চাইল। নবীজি বিব্রত হয়ে গেলেন। কারণ, রাতে তো আর মসজিদ ভালো করে দেখেননি। নবীজি বলেন, ‘এ রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আমি আগে পড়িনি।’ আল্লাহ তাআলা প্রিয় বন্ধুকে সাহায্য করলেন। নবীজির চোখের সামনে মেলে ধরলেন বাইতুল মুকাদ্দাসের দৃশ্য। নবীজি দেখে দেখে তাদের প্রত্যেকটি জিজ্ঞাসার বিস্তারিত জবাব দিলেন। (বুখারি: ৩৮৮৬) 

সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় ১৪ শিষ্টাচার
সুরা ইসরার ২২ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াতে মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ ১৪টি বিষয়ের আদেশ করেছেন। যথা—
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত না করা
২. বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচার
৩. আত্মীয়স্বজনদের অধিকার আদায়
৪. মিসকিনদের ও পথ সন্তানদের অধিকার আদায়
৫. অপচয় নিষেধ
৬. কৃপণতা নিষেধ
৭. সন্তানদের হত্যা করবে না
৮. ব্যভিচারের কাছেও যাওয়া যাবে না
৯. মানুষ হত্যা হারাম
১০. এতিমের সম্পদের কাছেও যাওয়া যাবে না
১১. ওয়াদা পালন
১২. সঠিকভাবে ওজন করা
১৩. জ্ঞান নেই, এমন বিষয়ের পেছনে না পড়া 
১৪. পৃথিবীতে দম্ভ নিয়ে না চলা

মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার 
সন্তানের জন্য দয়ার ভান্ডার সঞ্চিত আছে মায়ের মনে। বাবার বিশাল হৃদয়ে আছে অফুরন্ত শুভকামনা। মা-বাবা নির্ভয় ও নির্ভরতার আশ্রয়স্থল। পবিত্রতার পরশে বেড়ে ওঠার আঁতুড়ঘর। সন্তানের অস্তিত্বের প্রকাশ জুড়ে আছে মা-বাবার আত্মত্যাগ। তাঁদের ত্যাগেই সন্তান বেড়ে ওঠে। সুতরাং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের (বিরক্তিসূচক) ‘উফ’ বলো না এবং তাদের ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো। তাদের জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও এবং বলো—হে আমার প্রতিপালক, তাঁদের প্রতি দয়া করুন, যেমনভাবে তাঁরা আমাকে শৈশবে লালনপালন করেছেন।’ (সুরা ইসরা: ২৩) 

সুরা কাহাফ—গুহাবাসী তরুণদের গল্প
সুরা কাহাফ মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১১০। কোরআনের ১৮ তম সুরা এটি। কাহাফ অর্থ গুহা। সুরায় গুহাবাসীর কাহিনির বর্ণনা রয়েছে, সে দৃষ্টিকোণ থেকে সুরার নাম কাহাফ। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম: ৮০৯) 

এ সুরায় বেশ কয়েকটি ঘটনার বিবরণ রয়েছে। যথা—
১.৭ তরুণের গুহাবাসী হওয়ার ঘটনা 
২. বাগানের মালিকের বিশ্বাসের ঘটনা 
৩. মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা 
৪. বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা 

ইমান বাঁচাতে তরুণদের গুহায় আশ্রয়
সুরা কাহফের ৯ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে আসহাবে কাহফ তথা গুহাবাসীর ঘটনার বিবরণ রয়েছে। তখন সমাজ ছিল অবিশ্বাসে ভরা। কারও মধ্যে একত্ববাদের বিশ্বাস ছিল না। বাদশাহ ছিলেন মূর্তিপূজক। সেসময় সাতজন যুবক আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছিলেন। তাঁরা গোপনে ইবাদত করতেন। বাদশাহর কাছে একদিন বিষয়টি ধরা পড়লে তিনি তাঁদের হত্যার ঘোষণা দেন। ফলে ইমান রক্ষার জন্য তাঁরা বেরিয়ে পড়েন। একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন। তাঁদের সঙ্গে একটি কুকুরও ছিল। কুকুরের নাম ছিল কিতমির। কিতমির গুহামুখে বসে তাঁদের পাহারা দিল। বাদশাহর বাহিনী তাঁদের খুঁজে পেল না। 

 ৩০৯ বছরের বিস্ময়কর ঘুম
গুহায় আল্লাহ তাআলা আসহাবে কাহফের সদস্যদের ঘুম পাড়িয়ে দেন। সেই ঘুম ৩০৯ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ঘুম ভাঙার পর তাদের একজন খাদ্য সংগ্রহের জন্য শহরে এলে লোকজন তাঁকে চিনে ফেলে। তিনি ভেবেছিলেন কেউ চিনবে না। এর মধ্যে এত পরিবর্তন দেখে তিনি আশ্চর্য হন। এদিকে জালিম বাদশাহও তত দিনে মারা গেছেন। তাঁদের ওপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তিন তিনটি শতক। বর্তমান বাদশাহ আসমানি ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। 

লোকেরা তাঁকে দেখে বিস্মিত হয়ে নানা কথা বলছিলেন। তিনি গুহায় সঙ্গীদের কথা বলে দ্রুত কেটে পড়েন। গুহায় ফিরে তাদের বিস্তারিত কাহিনি শোনান। এদিকে বর্তমান বাদশাহ খবর পেয়ে দলবল নিয়ে সেখানে যান এবং দেখেন গুহার ভেতর সবাই মারা গেছেন। বাদশাহ সেই গুহামুখে তাঁদের স্মরণে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। 

এ ছাড়া তারাবির আজকের অংশে ফেতনা-বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে শাস্তি, সামাজিক জীবনে শিষ্টাচার, মানুষের তাড়াহুড়া, নবীজির প্রতি তাহাজ্জুদের নির্দেশ, আল্লাহর সুন্দর নাম, বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া, আল্লাহর সামনে যুক্তিতর্ক নিষেধ, নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়, প্রাণ হত্যা ও সততার সঙ্গে ব্যবসা ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

নামাজে সতর ঢাকা সম্পর্কে সতর্কতা

সীমান্ত পাহারা দেওয়া শ্রেষ্ঠতম ইবাদত

কবরে যে ২ গুনাহের শাস্তি দেওয়া হবে

মুমিনের চমৎকার ৪ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

সেকশন