আমজাদ ইউনুস
আত্মনির্ভরশীল মানুষকে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে। ইসলাম তার অনুসারীদের আত্মনির্ভরশীল হতে উৎসাহিত করে এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রচেষ্টাকে ইবাদত বলে গণ্য করে। ইসলাম অমুখাপেক্ষিতাকে মুমিনের মর্যাদা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিনের সম্মান তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে এবং তার মর্যাদা মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকার মধ্যে।’ (তাবারানি)
শৈশব থেকেই রাসুল (সা.) আত্মনির্ভরশীল ছিলেন। চাচার সংসারে অভাব-অনটন দেখে ছাগল চরানোর সংকল্প করেন এবং পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ছাগল চরাতেন। শৈশবে ছাগল চারণের পর পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেছেন। স্বীয় যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা এমন কোনো নবী পাঠাননি, যিনি বকরি চরাননি।’ তখন তাঁর সাহাবিরা বলেন, ‘আপনিও?’ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কয়েক কিরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরি চরাতাম।’ (বুখারি)
রাসুল (সা.) ঘরের মধ্যে নিজের কাজ নিজেই করতেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া স্ত্রী বা দাসদের কাজের আদেশ দিতেন না। বরং তিনি স্ত্রীদের সাংসারিক কাজে সহযোগিতাও করতেন।
আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নবী (সা.) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন?’ তিনি বললেন, ‘ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারবর্গের সহায়তা করতেন। আর নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য চলে যেতেন।’ (বুখারি)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ)
যুদ্ধের ময়দানেও রাসুল (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে কাজে শরিক হতেন। যুদ্ধের ময়দানে মাটি বহন করেছেন। বারাআ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) খন্দক যুদ্ধের দিন মাটি বহন করেছিলেন। এমনকি মাটি তাঁর পেট ঢেকে ফেলেছিল অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তাঁর পেট ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। (বুখারি)
আমজাদ ইউনুস, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক