হোম > ইসলাম

জেবুন নেসা মসজিদ: পরিবেশবান্ধব স্থাপত্যে নতুন সংযোজন

ইজাজুল হক, ঢাকা

রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় গড়ে উঠেছে নান্দনিক স্থাপত্য জেবুন নেসা মসজিদ। শিল্প এলাকা আশুলিয়ার জামগড়ায় নির্মিত এই স্থাপনায় পরিবেশবান্ধব নকশা গুরুত্ব পেয়েছে। ঢাকার আজিমপুরের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ, দক্ষিণখানের বায়তুর রউফ মসজিদ কিংবা লক্ষ্মীপুরের রামগতির আস-সালাম জামে মসজিদের পর প্রাকৃতিক নকশায় নির্মিত মসজিদের ধারায় এটি নতুন সংযোজন।

মসজিদটি এমন এক সময়ে নির্মিত হলো, যখন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তাপমাত্রা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলছে এবং প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট এসব সংকট থেকে মুক্তির একটিই পথ—প্রকৃতি বাঁচাতে হবে এবং আমাদের যান্ত্রিক জীবন যতটুকু সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদানে সাজাতে হবে; এমন সব উপাদান ত্যাগ করতে হবে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এই দেশে মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ প্রয়োজন। কারণ ইসলাম এই বিষয়কে সর্বতোভাবে সমর্থন করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জল-স্থলে মানুষের কৃতকর্মের কারণেই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।’ (সুরা রুম: ৪১) তাফসিরকারগণ বলেন, এখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের পেছনে যে মানুষের হাত রয়েছে, সে কথাও অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নকশা থেকে শুরু করে সবকিছুতে পরিবেশ রক্ষার স্পষ্ট বার্তা থাকা উচিত।

ঢাকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্টুডিও মরফোজেনেসিসের অন্যতম পরিচালক সাইকা ইকবাল মেঘনা জেবুন নেসা মসজিদের প্রধান স্থপতি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যে পড়াশোনা করেছেন এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায়ও যুক্ত রয়েছেন। মসজিদের জমিদাতা নিজের প্রয়াত মা জেবুন নেসার নামেই এর নামকরণ করেন।

একটি ছায়াঘেরা পুকুরের পাড়ে গোলাপি ইটের বুননে দাঁড়িয়ে থাকা অভিনব নকশার এই মসজিদ যেকোনো দর্শকেরই দৃষ্টি কাড়ে। মসজিদের ভেতর-বাইরের পরিবেশ এতই চমৎকার ও প্রাকৃতিক যে এই এলাকার শ্রমিক, পথচারী ও মুসল্লিদের দুদণ্ড প্রশান্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

নকশাকারদের মতে, মসজিদটি সমতল থেকে কিছুটা উঁচুতে অবস্থিত। বৃষ্টির মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলে যেন তা উপচে পড়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ না করে, সে জন্যই প্রচলিত এই শৈলী গ্রহণ করা হয়েছে। আশপাশের ভারী শিল্প এলাকার কঠোরতা থেকে কোমলতার দিকে আনতেই মসজিদের গায়ে গোলাপি রং ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধুলোময় গোলাপি আভা ঐতিহাসিক মোগল, সুলতানি ও ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যে ব্যবহৃত লাল-গোলাপি মাটির প্রতিনিধিত্ব করে।

সামনের আলোহীন আবদ্ধ মিহরাবের প্রচলিত নকশার বিপরীতে এই মসজিদে রয়েছে ব্যতিক্রমী এক খোলা মিহরাব। সামনে রয়েছে স্বচ্ছ পানির কৃত্রিম জলাধার। এরপর রয়েছে বড় প্রাকৃতিক পুকুর। প্রশস্ত খোলা খিলান দিয়ে মুসল্লিরা সামনের জলাশয় ও পুকুরটি স্পষ্ট দেখতে পান। অবশ্য বাতাসের সরাসরি ক্ষতিকর প্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে জলাশয়ের পর পুকুরপাড়ে মসজিদের সামনের খিলানের সমপরিমাণ কাচ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

জেবুন নেসা মসজিদ যেন মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার এক নিরাপদ আস্তানা। স্থপতিদের ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রেদিং প্যাভিলিয়ন’। মসজিদের চারপাশের দেয়ালগুলোতে রয়েছে অসংখ্য আয়তাকার ছিদ্র, যা দিয়ে আলো-বাতাস প্রবাহিত হয়। মসজিদের স্থপতি সাইকা ইকবাল মেঘনা বলেন, ‘এসব ছিদ্র প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যের আদলে মসজিদের ভেতরে আলোর মায়াজাল বোনে। ছোট ছোট ছিদ্রের মধ্য দিয়ে পরিশোধিত আলোর মিছিল যেন মসজিদের ভেতরে ঝাড়বাতির আবহ তৈরি করে।’

প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের জন্য মসজিদের সামনে-পেছনে আধখোলা কাঠামো রয়েছে, যা একই সঙ্গে সূর্যের সরাসরি আলো ও বৃষ্টি থেকে নিস্তার দেয়। ভেতরের কাঠামো গোলাকার হয়ে ওপরে উঠে বিশালাকার অগভীর গম্বুজ তৈরি করেছে। মাঝখানে কোনো স্তম্ভ নেই। গম্বুজের বাইরের চারপাশে কিছুটা ফাঁকা রেখে গড়ে ওঠা হালকা বাঁকানো ছিদ্রযুক্ত চারদেয়াল মসজিদের নকশাকে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব করে তুলেছে। মসজিদের সামনে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ।

পূর্ব পাশে বাইরে একটি ইস্পাতের সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ির ওপরে অর্ধচাঁদ আকারের একটি ফ্লোর তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে সরাসরি নিচতলার ইমাম ও মুসল্লিদের স্থান দেখা যায়। মেজ্জানাইন নামের এই স্থান নারীদের নামাজের জন্য বরাদ্দ। স্থপতি সাইকা ইকবাল মেঘনা বলেন, ‘একজন ধর্মপ্রাণ নারীর নামে নির্মিত এই মসজিদে নারীদেরও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন নারী হিসেবে এই মসজিদের নকশা করতে পেরে আমি গর্বিত।’

লাল সিমেন্ট ও ভাঙা ইটের টুকরোয় তৈরি হয়েছে খানিক প্রসারিত বাইরের মেঝেটি। সেখানে এক পাশে রয়েছে স্বচ্ছতা ও পবিত্রতার প্রতীক ফিরোজা মোজাইকে তৈরি অজুখানা। কিছুটা নিচু আলাদা ছাদে নির্মিত হয়েছে অজুখানাটি, যেখান থেকে পাশের বড় পুকুরটি স্পষ্ট দেখা যায়। পূর্ব পাশের মাটির উঠোনে গজাচ্ছে সবুজ ঘাস। সব মিলিয়ে জেবুন নেসা মসজিদের নকশা দুর্দান্ত বলা যায়। এ যেন প্রকৃতির মাঝে বসে স্রষ্টার কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ার সেরা আয়োজন। 

তথ্যঋণ: ডিজিন ডটকম

জানাজা ও কাফনদাফনে অংশ নেওয়ার সওয়াব

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

নামাজে সতর ঢাকা সম্পর্কে সতর্কতা

সীমান্ত পাহারা দেওয়া শ্রেষ্ঠতম ইবাদত

কবরে যে ২ গুনাহের শাস্তি দেওয়া হবে

সেকশন