হোম > ইসলাম

মদিনার সবুজ গম্বুজের হাজার বছরের ইতিহাস

আমজাদ ইউনুস 

মদিনায় রাসুল (সা.)–এর রওজার কাছাকাছি এসে জিয়ারতকারী ও দর্শনার্থীদের সবুজ গম্বুজই প্রথম চোখে পড়ে। সহস্র নবী প্রেমিকের আবেগের উচ্চতম স্থান দখল করে আছে এই গম্বুজ। এ গম্বুজ দেখামাত্রই তাঁদের নবীজির রওজার কথা স্মরণ হয়। হৃদয়ে প্রেম, ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগ্রত হয়। মসজিদে নববীর এ বড় সবুজ গম্বুজটি স্বচক্ষে দেখার জন্য গভীর আগ্রহ ও বাসনা বুকের ভেতর লালন করেন তাঁরা। জায়নামাজে অশ্রু ফেলেন। কারণ এখানেই শায়িত আছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। 

গম্বুজটি মদিনার মসজিদে নববীর দক্ষিণ–পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি আল–কুব্বাতুল খাজরা বা সবুজ গম্বুজের পাশাপাশি আল কুব্বাতুল বায়দা, ফায়হা, খাজরা নামেও পরিচিত ছিল। সাহাবি ও তাবেয়িদের যুগে রাসুল (সা.)–এর কবরের ওপর স্থাপিত এ সবুজ গম্বুজটির অস্তিত্ব ছিল না। তখন কক্ষটি শুধু কোমর পর্যন্ত দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। মামলুক সুলতান নাসির মুহাম্মদ বিন কালায়ুনের বাবা সুলতান মানসুর কালায়ুন আস–সালেহির শাসনামলে ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তথা ৬৭৮ হিজরিতে এটি সর্বপ্রথম নির্মিত হয়। 

এর মূল কাঠামোটি কাঠের তৈরি ছিল। বৃষ্টির পানির সংস্পর্শ রোধ করতে কাঠের গম্বুজ সিসার পাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং তার ওপরে একটি তারপলিনের কাপড় দেওয়া হয়। গম্বুজটি নিচের দিকে ছিল চতুর্ভুজ এবং ওপরের দিকে অষ্টভুজ। তখন গম্বুজটিতে আলাদা কোনো রং করা ছিল না। পরে পুনর্নির্মাণে সাদা এবং নীল রং দেওয়া হয়।

৭৫৫–৭৬২ হিজরিতে সুলতান আল–নাসির হাসান বিন মুহাম্মদ বিন কালায়ুন পবিত্র গম্বুজের সিসার পাত পুনঃসংস্কার করেন। ৭৬৫ হিজরিতে সুলতান শাবান বিন হুসাইন পবিত্র গম্বুজটির কিছু অংশ মেরামত করেন। পরে বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের ফলে গম্বুজে ত্রুটি দেখা দেয়। ৮৮১ হিজরিতে এটি ফের মেরামত করা হয়। 

৯৭৪ হিজরিতে, ওসমানীয় সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিশেন্ট পবিত্র গম্বুজের সিসার পাত মেরামত করেন এবং এতে তুর্কি খেলাফতের প্রতীকবাহী চন্দ্রাকৃতি স্থাপন করেন। ১২৩৩ হিজরিতে গম্বুজের শীর্ষে ফাটল দেখা দেয়, তৎকালীন গভর্নর এটির সংস্কারের নির্দেশ দেন। এরপর এর শীর্ষ অংশ ভেঙে ফেলা হয় এবং অত্যন্ত মজবুত ও নিখুঁতভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়। 

১২৫৩ হিজরিতে সুলতান আবদুল হামিদ দ্বিতীয় গম্বুজটিকে নীলের পরিবর্তে সবুজ রং করার আদেশ জারি করেন। তিনিই প্রথম সবুজ রং ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে যখন প্রয়োজন হতো এটিতে সবুজ রং ব্যবহার করা হতো। ১৪৮১ সালে মসজিদে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মসজিদের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং রওজাপাকের ওপরে থাকা গম্বুজ ধসে পড়ে রাসুল (সা.)–এর কবর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। 

তৎকালীন মিসরের মামলুক সুলতান সাইফউদ্দিন আল–আশরাফ কায়েতবাই মসজিদ নতুন করে সংস্কার করেন। তিনি রওজার ওপরে কাঠের তৈরি গম্বুজটি নতুন করে তৈরি করেন এবং এর বাইরের অংশে সিসার পাত ব্যবহার করেন। তিনি রাসুল (সা.)–এর হুজরার ওপর একটি কালো পাথরের গম্বুজও নির্মাণ করেন। ভবিষ্যতে গম্বুজটির পতন রোধ করার জন্য কায়েতবাই বেশির ভাগ কাঠ ইটের কাঠামো দিয়ে প্রতিস্থাপন করেন। নবীজির সমাধি সৌধসহ এই কাঠামোটি কায়েতবাইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপকভাবে নবায়ন করা হয়েছিল। 

১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ রাসুল এতে সবুজ আস্তরণ দেন। ১৯৩২ সালে সৌদি শাসনামল শুরু হওয়ার পর থেকে মসজিদে নববীর অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। কয়েকটি ধাপে গম্বুজের সংস্কার, মেরামতসহ কয়েকবার সবুজ রং করা হয়েছে। 

লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক

অসহায়ের পাশে দাঁড়ালে যে সওয়াব

মসজিদুল আকসার বিস্ময়কর ৫ তাৎপর্য

নতুন বছরে জীবন সাজুক ইমানি নুরে

সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবির আল-আকসা জয়ের গল্পগাথা

একই কবরে একাধিক লাশ দাফনের বিধান

বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত

মজলুমের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

তাকওয়া অর্জনের সহজ ৩ উপায়

রমজানের রোজার কাফফারা: বিধান ও নিয়ম

স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতি উৎসাহিত করে ইসলাম