ঈদুল ফিতরের পর ঈদুল আজহা মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কোরবানির মাধ্যমে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিনের বিশেষ কিছু করণীয় যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বর্জনীয়। এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো—
ঈদের দিনে করণীয়
ঈদের নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত।
সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নত।
কোরবানির দিনে ঈদের নামাজের আগে কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব। নবী (সা.) ঈদুল আজহার দিন কিছুই খেতেন না, যে পর্যন্ত ঈদের নামাজ আদায় করতেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া ও অন্য পথ দিয়ে ফেরা সুন্নত। (বুখারি)
সম্ভব হলে ঈদগাহে হেঁটে যাওয়াও সুন্নত। (ইবনে মাজাহ)
ঈদের দিন তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নত। পুরুষেরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, মেয়েরা নীরবে।
ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছেন।
ঈদের দিনে ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত।
ঈদের দিনে সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ছিল, ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। (অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও তোমার কাজ কবুল করুন)
ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
কোরবানির গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া তোহফা দেবে ও গরিব মিসকিনকে দান করবে।
ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড়ের কারণে যেন পরিবেশ দূষিত না হয় সেদিকে প্রত্যেক মুসলিমের সতর্ক হওয়া উচিত।
কোরবানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত, আবর্জনা ও হাড় নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া উচিত।
ঈদের দিনে বর্জনীয়
ঈদের নামাজের আগে ও ফজরের নামাজের পরে কোনো নামাজ নেই।
ঈদের নামাজের কোনো আজান ও ইকামত নেই।
ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।
ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের বিশেষ দিন মনে করে জিয়ারত করা বিদআত। তবে পূর্বনির্ধারিত রুটিন ছাড়া হঠাৎ সুযোগ হয়ে গেলে একাকী কেউ জিয়ারত করলে দূষণীয় নয়।
অনেকে ঈদের আনন্দে মশগুল হয়ে নতুন জামাকাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যায়। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত ও কোরবানি করাই হচ্ছে মুসলমানদের মূল কাজ।
ঈদগাহে বা ঈদের দিন সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা ও মুআনাকা করতেই হবে এমন বিশ্বাস ও আমল করা বিদআত। তবে এমন বিশ্বাস না করে সালাম ও মুসাফাহার পর মুআনাকা (গলায় গলা মেলানো) করায় কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মুসাফাহা ও মুআনাকা করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়।
কোরবানির গোশত, চামড়া ও এর কোনো অংশ বিক্রি করা যাবে না। অর্থাৎ বিক্রি করে নিজে উপকৃত হওয়া যাবে না। এমনকি কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে গোশত দেওয়া নিষিদ্ধ (বুখারি ও মুসলিম)। তবে সাধারণভাবে কাউকে খেতে দেওয়ায় অসুবিধা নেই।
ঈদের দিন উপলক্ষে যেখানে গান-বাজনা, অবাধে নারী-পুরুষ বিচরণ ইত্যাদির আয়োজন থাকে—এমন মেলা আয়োজন করা, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা দেওয়া যাবে না।