আপনার জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন: ঘোড়ার গোশত খাওয়া হালাল না হারাম? ইসলাম এ বিষয়ে কী বলে জানতে চাই।
মেরাজুল হক, ঢাকা
উত্তর: ঘোড়ার গোশত হালাল। সুতরাং তা খাওয়া জায়েজ। হানাফি মাজহাবের ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.), ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) ও অন্যান্য মাজহাবের ইমামগণ ঘোড়ার মাংস খাওয়াকে পুরোপুরি হালাল বলেছেন।
ইমামদের মতের পক্ষে কিছু হাদিস রয়েছে। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খায়বার যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাধার মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারি: ৩৯৮২)
হজরত জাবের (রা.) আরও বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে একবার সফর করেছিলাম। সফরে আমরা ঘোড়ার গোশত খেতাম এবং তার দুধ পান করতাম।’ (দারাকুতনি ও বায়হাকি)
আরেক হাদিসে আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর যুগে একটি ঘোড়া জবাই করে খেয়েছিলাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৪২)
তবে ঘোড়া যেহেতু যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাই গণহারে ঘোড়ার গোশত খেলে যুদ্ধের সময় সংকট দেখা দিতে পারে, এই আশঙ্কায় ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঘোড়ার গোশত খাওয়াকে মাকরুহ বলেছেন। এ ছাড়া খাদ্যের চেয়ে যুদ্ধ সামগ্রী হিসেবে ঘোড়ার প্রয়োজনীয়তা বেশি বলে তিনি মত দিয়েছেন।
ইমাম আবু হানিফার মতের পক্ষে একটি হাদিস পাওয়া যায়। হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৪৮)
এখন যুদ্ধক্ষেত্রে যদিও ব্যাপক হারে ঘোড়ার ব্যবহার হয় না, কিন্তু তা একেবারে বন্ধও হয়ে যায়নি। তাই পুলিশ ও সামরিক কেন্দ্রগুলোতে ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং নিয়মিত তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
বর্তমান সময়ে ব্যাপকভাবে ঘোড়ার গোশত খেলে যদি বাহন হিসেবে বা যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ঘোড়ার সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মত অনুযায়ী ঘোড়ার গোশত খাওয়া মাকরুহ হবে। এ ছাড়া জিহাদের কাজে ঘোড়ার ব্যবহার একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও তা খাওয়া হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর বর্ণিত হাদিসের কারণে অনুচিত থাকবে।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি হাসান আরিফ, ইসলামবিষয়ক গবেষক