হোম > ইসলাম

তামাকজাত দ্রব্যের শরয়ি বিধান

প্রশ্ন: বিড়ি-সিগারেট-জর্দা ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্য সেবন করা বা খাওয়া কি ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ? কোরআন-হাদিসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব। 
জাকারিয়া আহসান, ঢাকা

উত্তর: মহান আল্লাহ খাদ্যদ্রব্যকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন—হালাল ও হারাম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেছেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেছেন।’ (সুরা আরাফ: ১৫৭) আরও এরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, এদেরকে বলে দিন, হালাল ও হারাম কখনো এক নয়; অপবিত্রের আধিক্য তোমাদের যতই চমৎকৃত করুক না কেন।...’ (সুরা মায়েদা: ১০০) যেসব বিষয় হারাম হওয়ার ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে কোরআন-হাদিসে উল্লেখ নেই তা খাওয়া জায়েজ। তবে হারাম বস্তুর কাছাকাছি হওয়ার কারণে অনেক বস্তুকে আলেমগণ নাজায়েজ বা মাকরুহ বলেছেন। 

উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ধারার আলিমগণ জর্দা-সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনকে সরাসরি হারাম বলে ফতোয়া দেননি। কারণ এ ব্যাপারে কোরআন-হাদিসে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আসেনি। তাই ‘সকল বস্তু মূলত হালাল, যতক্ষণ না হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের স্পষ্ট দলিল পাওয়া যায়’ নীতির আলোকে তারা একে হারাম বলেন না। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়া, অপ্রয়োজনীয় খাবার হওয়া ইত্যাদি কারণে মাকরুহ বলেন। দেওবন্দের এক ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘মদ পান করা সম্পূর্ণ হারাম। তা সেবনে মাতলামি সৃষ্টি হয়। পানে খাওয়া তামাকদ্রব্যের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আসেনি, আবার তা সেবনে মাতলামি আসে না, বড়জোর মাথা ঘোরায়। তাই তা সেবন করা মাকরুহ। (দেওবন্দ ডটকম, ফতোয়া: ৩৫৬৫৫)

তবে আরব বিশ্বের অনেক আলিম বিভিন্ন মূলনীতির আলোকে তামাকজাত দ্রব্যসমূহ সেবন করাকে সরাসরি হারাম ফতোয়া দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন—

  • এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়। আর ইসলামে অপচয় হারাম। (সুরা ইসরা: ২৭)
  • এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)
  • বেশি ধূমপান করলে জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যা বেশি সেবন করলে নেশার সৃষ্টি হয়, তা কম সেবন করাও হারাম।’ (তিরমিজি: ১৮৬৫; আবু দাউদ: ৩৬৮১)
  • এতে দুর্গন্ধ আছে। এই দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। ইসলামে অন্যকে কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে।’ (বুখারি: ৫৬৭৩; মুসলিম: ১৮২)
  • সিগারেট ও জর্দা পুষ্টিকর বা ক্ষুধা নিবারণমূলকও কিছুই নয় যে মানুষের শরীরের জন্য উপকার হবে। জাহান্নামিদের খাবারের প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এটি তাদের পুষ্টিও জোগাবে না, ক্ষুধাও নিবারণ করবে না।’ (সুরা গাশিয়া: ৭) 

বিড়ি-সিগারেট-জর্দার স্বাস্থ্যগত ক্ষতি সর্বজনস্বীকৃত। এসব পণ্যের মোড়কেই এগুলোর ক্ষতির কথা লেখা থাকে। গবেষকগণ বলেন, এসবে ‘অ্যালকালয়েড’ ও ‘নিকোটিন’ অধিক মাত্রায় থাকে। কেবল পার্থক্য হলো জর্দায় হালকা সুগন্ধি মিশ্রিত করা হয়। ফলে ধূমপানে ফুসফুস ক্যানসার আর জর্দায় মুখের ক্যানসার হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। এসব কারণে অনেক আলিম তামাকজাত দ্রব্য খাওয়া বা সেবনকে হারাম ঘোষণা করেছেন। 

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক এবং সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

কোরআনে ইসলাম প্রচারকের অপরিহার্য ৫ গুণ

জানাজা ও কাফনদাফনে অংশ নেওয়ার সওয়াব

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

নামাজে সতর ঢাকা সম্পর্কে সতর্কতা

সীমান্ত পাহারা দেওয়া শ্রেষ্ঠতম ইবাদত

সেকশন