মাওলানা ইমরান হোসাইন
জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ঐতিহাসিক এক অসম যুদ্ধের নাম বদর যুদ্ধ। আল্লাহ তাআলার অশেষ দয়া ও মেহেরবানিতে যেখানে মজলুম বিজয়ী হয়েছে। দীর্ঘ ১৩টি বছর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কার কাফিরদের নির্যাতন সয়ে গিয়েছেন। ধৈর্য ধারণ ও ক্ষমা করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁরা আদিষ্ট ছিলেন। মক্কার কুরাইশদের জুলুমের সীমা ছাড়িয়ে গেলে মদিনায় হিজরতের পর আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের অস্ত্র ধারণের অনুমতি দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘(কাফিরদের পক্ষ থেকে) যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদের (নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য যুদ্ধ করার) অনুমতি দেওয়া হলো। কারণ তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের জয়যুক্ত করতে পরিপূর্ণ সক্ষম।’ (সুরা হজ: ৩৯)
পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো। তবে সীমালঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ তাআলা সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা বাকারা: ১৯০)
এই অনুমতির পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মদিনা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বদর প্রান্তরে সংঘটিত এই যুদ্ধের নাম বদর যুদ্ধ। বস্তুগত দিক থেকে এটি ছিল মুসলিম ও কাফিরদের মাঝে এক অসম যুদ্ধ। মুসলিমরা সংখ্যায় ৩১৩ জন; বিপরীতে কাফিররা ছিল তিন গুণেরও বেশি—১ হাজার জন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিজের ওয়াদা অনুসারে মুসলমানদের সাহায্য করেছেন। দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও বদর যুদ্ধে বিজয়ের মালা মুসলমানদের গলায় পরিয়েছেন। (সুরা আল ইমরান: ১১৩)
বদর যুদ্ধের শুরু ও শেষের ঘটনাপ্রবাহে বহুবিধ শিক্ষা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম শিক্ষা হলো, জালিমকে আল্লাহ তাআলা একটা সময় পর্যন্ত সুযোগ দিলেও শেষ বিচারে মজলুমের হাতেই জালিমের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। মজলুম ইতিহাসের পাতায় সমহিমায় টিকে থাকে, জালিম ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
লেখক: শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক