হোম > ইসলাম

ত্যাগের উৎসব ঈদুল আজহা

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান

ঈদুল আজহা মুসলিম মিল্লাতের দ্বিতীয় প্রধান উৎসব। ঈদ অর্থ খুশি আর আজহা অর্থ কোরবানি করা। তাই ঈদুল আজহা অর্থ কোরবানি করার খুশি। ইসলামের পরিভাষায়, বিশ্ব মুসলিম পরম ত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ জিলহজ মাসের ১০ তারিখ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মহাসমারোহে পশু জবাই করার মাধ্যমে যে আনন্দ উৎসব পালন করে থাকে, তাকে ঈদুল আজহা বলে।

মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর সেখানকার লোকজন আরজ করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমরা ইসলাম-পূর্ব যুগে নববর্ষ উপলক্ষে ‘নওরোজ’ ও বসন্তের আগমন উপলক্ষে ‘মেহেরজান’ নামের উৎসব পালন করতাম। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তা আর করতে পারি না। তখন মহানবী (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা আদায় করার মাধ্যমে আনন্দ-উৎসব পালন করার জন্য মুসলমানদের নির্দেশ দেন। ঈদুল ফিতর রমজান শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে এবং ঈদুল আজহা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালন করা হয়। 

যুগে যুগে কোরবানি
মানবেতিহাসে প্রথম কোরবানি করেন হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল। সে-সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তাদের কাছে সত্যসহ আদমের দুই পুত্রের সংবাদ বর্ণনা করো, যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করল। এরপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হলো, আর অন্যজন থেকে গ্রহণ করা হলো না।’ (সুরা মায়িদা: ২৭) 

এর পর থেকে কোরবানির বিধান যুগে যুগে সব নবী-রাসুলের জন্যই ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যেসব জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার ওপর। তোমাদের উপাস্য তো একজনই; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো; আর অনুগতদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা হজ: ৩৪)

তবে বর্তমানে যেভাবে কোরবানি করা হয়, তা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে তিনি প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা পালনের জন্যই শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের জন্য কোরবানি করার বিধান দিয়েছেন। 

ঈদুল আজহার শিক্ষা
ঈদুল আজহা যে শিক্ষা ও আদর্শ আমাদের সামনে তুলে ধরে, তা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কয়েকটি শিক্ষার কথা তুলে ধরা হলো:

ইবরাহিম (আ.)-এর আদর্শ গ্রহণ
ঈদুল আজহার মূল শিক্ষাই হলো, ইবরাহিম (আ.)-এর আদর্শ ধারণ করা। কারণ, তিনি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কোরবানি করেছিলেন। কেবল মাংস ও রক্তের নাম কোরবানি নয়; বরং আল্লাহর পথে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার এক দৃপ্ত শপথের নাম কোরবানি।

প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি পশুর গলায় ছুরি চালায় না, বরং সে ছুরি চালায় মানুষের কুপ্রবৃত্তির গলায়; যা সম্পাদন শেষে মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। এটিই কোরবানির মূল নিয়ামক। এই অনুভূতি ছাড়া কোরবানি করা কেবল মাংস খাওয়ারই নামান্তর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর মাংস, রক্ত— কিছুই পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তোমাদের আল্লাহভীতি।’ (সুরা হজ: ৩৭)

যে কোরবানির মধ্যে যশ-খ্যাতির মোহ আছে, আল্লাহর কাছে এর কোনো মূল্য নেই। যারা কেবল আল্লাহর ভয়ে তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোরবানি করে, তাদের কোরবানিই তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকিদের থেকে তা গ্রহণ করেন।’ (সুরা মায়িদা: ২৭) 

পিতা-পুত্র সম্পর্কোন্নয়ন
ঈদুল আজহা পিতা-পুত্রের সম্পর্ক উন্নয়ন করে। কেননা ইবরাহিম (আ.) মুসলিম জাতির পিতা। তিনি এবং তাঁর পুত্রের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক ছিল, তা বর্তমান সমাজে বিরল। তিনি পুত্রকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা জীবননাশকারী জেনেও পুত্র তাতে সম্মত হয়েছিলেন।

যেমন বাবা, তেমন পুত্র। পুত্র জানেন, পিতা তাঁর অমঙ্গল চাইবেন না এবং পিতাও জানেন, পুত্র তাঁর কথায় সম্মত হবেন। এ কারণেই আল্লাহ কোরবানি করা প্রতিবছর আমাদের জন্য ওয়াজিব করেছেন। বর্তমানে আমাদের উচিত, বাধ্য সন্তান তৈরি করা। যারা পরিবার, দেশ ও সমাজের কল্যাণের পাশাপাশি মুগ্ধ আচরণে সবাইকে আকৃষ্ট করবে।

কোরবানি অহংকার চূর্ণ করে
ঈদুল আজহা ব্যক্তির অহংকার চূর্ণ করে দেয়। ব্যক্তি অনেক টাকায় পশু কিনে ভাবতে থাকে, আমার পশুই সেরা। তার মনে অহংকার সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোরবানি করার মাধ্যমে এত দামি পশুও বিলীন হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তির সেই অহংকার চূর্ণ হয়ে যায়। কোরবানি ব্যক্তির পাশবিকতাকেও চূর্ণ করে। পশুর মধ্যে যে রাগ, ক্রোধ রয়েছে, যার মাধ্যমে সে অন্য পশুর প্রতি কঠোর হতো, কোরবানির মাধ্যমে তা নিমেষেই শেষ হয়ে যায়। তেমনি মানুষের মধ্যকার রাগ-ক্রোধ মৃত্যুর মাধ্যমে বিলীন হয়ে যায় এবং তার পশুত্বও শেষ হয়ে যায়।

সহমর্মী করে
ঈদুল আজহা মানুষকে সহমর্মী করে তোলে। কোরবানির মাংস কেবল কোরবানিদাতাই খাবে না; বরং তা তিনটি ভাগ করে এক ভাগ নিজের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের এবং আরেক ভাগ গরিব-মিসকিনের। যখন ব্যক্তি অন্যকে মাংস দেয়, তখন তার অন্তর অন্যের জন্য কোমল হয়ে ওঠে। ঈদুল আজহার শিক্ষাগুলো জীবনে বাস্তবায়ন করা আমাদের কর্তব্য। 
 
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

নামাজে সতর ঢাকা সম্পর্কে সতর্কতা

সীমান্ত পাহারা দেওয়া শ্রেষ্ঠতম ইবাদত

কবরে যে ২ গুনাহের শাস্তি দেওয়া হবে

মুমিনের চমৎকার ৪ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

সেকশন