২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। ইতিমধ্যে প্রায় সব প্রার্থীর প্রস্তুতি শেষ; কেউ রিভাইজ দিচ্ছেন, কেউবা মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন। যথাযথ প্রস্তুতির সঙ্গে আগামী ৭ দিনের ঠিকঠাক ব্যবহার ও পরীক্ষা হলের কিছু কৌশল আপনাকে চূড়ান্ত বিজয়ী করতে পারে।
পরীক্ষার আগের সাত দিনে করণীয়
- প্রতিদিন সময় ধরে একটি করে মানসম্মত মডেল টেস্ট দিন। আগের দিনের মডেল টেস্টের সঙ্গে আজকের মডেল টেস্টের ফলাফলের পার্থক্য অ্যানালাইসিস করুন। অ্যানালাইসিস করার পয়েন্টগুলো হতে পারে মোট নম্বরের পার্থক্য, প্রতিটি বিষয়ের নম্বরের পার্থক্য, আন্দাজে দেওয়া উত্তরগুলো থেকে সঠিক হওয়ার পার্থক্য, নেগেটিভ নম্বরের পার্থক্য ইত্যাদি।
- যে কলম দিয়ে বৃত্ত ভরাট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেই ব্র্যান্ডের ৩টি কলম আগে থেকেই কালি নরমাল করে রাখুন। ম্যাটাডোর আইটিন ওয়েল বলপেনের মতো মোটা নিবের কলম দ্রুত বৃত্ত ভরাট করতে সাহায্য করে। একাধিক অ্যাডমিট কার্ড প্রিন্ট করে রাখুন। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর, হাতঘড়ি বা অন্য কোনো কিছু নিয়ে যাবেন না। এগুলো নিজ দায়িত্বে বাইরে রাখতে হয়, ফলে হারানোর দুশ্চিন্তা আপনার পরীক্ষায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সব কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে পিএসসি থেকে দেয়ালঘড়ি সরবরাহ করা হয়।
- পরীক্ষার আগের দিন মডেল টেস্ট বা নতুন পড়া পড়ে স্ট্রেস নেবেন না। পড়তে চাইলে বিসিএসের বিগত প্রশ্নগুলো দেখুন, এটি অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। ভালো করে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সিটপ্ল্যান দেখে নিন। সম্ভব হলে আগের দিন পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে দেখে আসুন। পরীক্ষার আগে ভুলে যাচ্ছি, কিছুই মনে নেই—এগুলো খুব কমন বিষয়, স্বাভাবিক থাকুন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা দিন, খাবারদাবার ও শারীরিক সুস্থতায় নজর দিন। পরীক্ষার আগের রাত ১০টার মধ্যে অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়ুন।
পরীক্ষার দিনে করণীয়—
- পিএসসির আসনবিন্যাসের নোটিশ দেখে আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর অনুযায়ী পরীক্ষার কেন্দ্র নিশ্চিত করুন। হাতে সময় রেখে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাবেন। পিএসসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের পর কেন্দ্রের মূল গেট বন্ধ হয়ে যাবে।
- ওএমআর শিটের সব তথ্য নির্ভুলভাবে পূরণ করুন, হাজিরা পাতায় অ্যাডমিট কার্ডের অনুরূপ স্বাক্ষর করুন। প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রে আগে থেকেই সেট কোড বসানো থাকবে। আপনাকে একই সেট কোডের প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছে কি না, মিলিয়ে নেবেন। প্রশ্নের সিরিয়ালে ক-খ-গ-ঘ পাশাপাশি নাকি ওপর-নিচে সাজানো, সেটি সচেতনভাবে খেয়াল করুন। উত্তর দেওয়ার ধারাবাহিকতা প্রার্থীভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে স্ট্রেস কমানোর জন্য সাধারণ জ্ঞান-বাংলা-বিজ্ঞান-ইংরেজি-গণিতএই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা যেতে পারে।
- প্রিলিমিনারি পরীক্ষার হলে সময়বণ্টন খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রিলিমিনারিতে প্রতিটি প্রশ্নোত্তরের জন্য ৩৬ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো—ইংরেজি ও গণিত ছাড়া বাকি ১৩৫টি এমসিকিউ ১ ঘণ্টায় এবং ৬৫টি এমসিকিউ (ইংরেজি ও গণিত) ১ ঘণ্টায় উত্তর দিন। তাহলে পূর্ণ উত্তর করা সহজ হবে। প্রথম দেখায় কোনো উত্তর না পারলে সেটি বিশেষ চিহ্ন দিয়ে শেষের ১০ মিনিটের জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। সব প্রশ্নের মান সমান, তাই কিছু কঠিন প্রশ্ন ছেড়ে দিয়ে সময় বাঁচানোটা কৌশলী সিদ্ধান্ত হতে পারে। নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশে সব উত্তর দিতে গিয়ে যেন নেগেটিভ নম্বরের শিকার হতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
- একদম ধারণা না থাকলে সেই প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াই ভালো। কারণ, ১০টি প্রশ্ন আন্দাজে উত্তর দিয়ে যদি ৩টি সঠিক ও ৭টি ভুল হয়, তাহলে আপনার ৩ নম্বর যোগ হবে এবং ৩.৫০ (৭.৫০) নম্বর বাদ যাবে। তবে উত্তর সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হলে বা নিজের সিক্সথ সেন্সের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকলে সেটি উত্তর করা যেতে পারে।
- পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্রে গণিত রাফ করা যাবে, তবে অ্যাডমিট কার্ডে দাগ দেওয়া যাবে না।
- বিসিএস ক্যাডার হতে হলে সব বিষয়ে অলরাউন্ডার হতে হয়; কিন্তু কোনো বিষয়ে দুর্বলতা নিয়েও প্রিলিমিনারিতে টিকে যাওয়া সম্ভব। তাই আপনার দুর্বলতাকে ভয় না পেয়ে, শক্তিশালী পয়েন্টকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। বিগত পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রিলিমিনারিতে ১৩০/১৪০ নম্বর নিশ্চিত করতে পারলেই লিখিত পরীক্ষা দেওয়ারসুযোগ পাওয়া যাবে।
- প্রশ্ন যত কঠিনই হোক, পরীক্ষার পুরো সময় মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা শেষ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জন্য যে প্রশ্নটা কঠিন, সেটা অনেকের জন্যই কঠিন! পাশাপাশি, সহজ প্রশ্নে যতজন টিকবে, কঠিন প্রশ্নেও ততজনই টিকবে। সবার জন্য শুভকামনা।
রবিউল আলম লুইপা, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)