আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্রমাগত বাড়ছে কাজের চাপ। কখনো অফিসের মিটিং, কখনো পরিবারের দায়িত্ব, আবার কখনো সামাজিক অনুষ্ঠানের দাওয়াত; সব মিলিয়ে কোথায় কী গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝাই কঠিন হয়ে পড়ে। এই জটিল সমস্যার সমাধান দিতে পারে একটি সহজ অথচ কার্যকর পদ্ধতি আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্স।
এই ম্যাট্রিক্স তৈরি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার, যিনি দক্ষতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন। এটি চারটি কোয়াড্রান্টে ভাগ করা হয়েছে, যেখানে কাজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বাছাই করা হয়। চলুন, একবার গভীরে তাকাই।
কোয়াড্রান্ট-১: জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ
এই বিভাগে সেই কাজগুলো থাকে, যেগুলো একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। যেমন অফিসের জরুরি রিপোর্ট জমা দেওয়া, কোনো স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যার তৎক্ষণাৎ সমাধান বা বড় মিটিংয়ের প্রস্তুতি। এই কাজগুলো তাৎক্ষণিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে। যদি এগুলো সময়মতো না করা হয়, তবে তা বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
উদাহরণ
- অফিসে শেষ মুহূর্তে ক্লায়েন্ট প্রেজেন্টেশন।
- হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতায় ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ।
কোয়াড্রান্ট-২: গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু জরুরি নয়
এটি আইজেনহাওয়ার ম্যাট্রিক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এই কোয়াড্রান্টে থাকা কাজগুলো তাৎক্ষণিক নয়, তবে এগুলো দীর্ঘমেয়াদে আপনার জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। তাই এগুলো সময় নির্ধারণ করে ধীরে ধীরে সম্পন্ন করা উচিত।
উদাহরণ
- ব্যক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নতুন কিছু শেখা।
- স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যায়াম করা।
- ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তৈরি করা।
আমরা বেশির ভাগ সময় এই কোয়াড্রান্টের কাজগুলো এড়িয়ে যাই, কারণ এগুলো ‘জরুরি’ নয়। তবে সফল মানুষেরা এই কাজগুলোতে মনোযোগ দেন, কারণ এগুলো দীর্ঘমেয়াদে তাঁদের দক্ষতা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।
কোয়াড্রান্ট-৩: জরুরি, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়
এই বিভাগে থাকা কাজগুলো জরুরি বলে মনে হয়, কিন্তু আসলে আপনার ব্যক্তিগত গুরুত্ব বহন করে না। আপনি এগুলো অন্য কাউকে ডেলিগেট করতে পারেন।
উদাহরণ
- কোনো কল বা ইমেইল, যা অন্য কেউ উত্তর দিতে পারে।
- ছোটখাটো কাজ, যা অন্য কারও হাতে ছাড়া যায়।
এই কাজগুলো প্রায়ই আমাদের সময় নষ্ট করে এবং শক্তি অপচয় করে। তাই দক্ষভাবে এগুলো পরিচালনা করা জরুরি।
কোয়াড্রান্ট-৪: জরুরি নয় এবং গুরুত্বপূর্ণও নয়
এটি একেবারে সময় নষ্টের কাজ। এই কাজগুলোকে এড়িয়ে চলা উচিত।
উদাহরণ
- সোশ্যাল মিডিয়ায় অপ্রয়োজনীয় স্ক্রলিং।
- অর্থহীন গসিপ বা টিভি শো দেখা।
এগুলো আপনার জীবনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না। তাই এগুলোকে সরাসরি বাদ দেওয়াই ভালো।