সকালে উঠে যানজট ঠেলে জাতীয় বৃক্ষমেলার মাঠে পৌঁছাতে ঘড়িতে বেজে গেল বেলা এগারোটা। নয়টা থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার গেট দিয়ে ঢুকেই চলে গেলাম সোজা। টাওয়ার পেড়িয়ে সারি সারি গাছের ভিড়। বিভিন্ন নার্সারি নিয়ে এসেছে তাদের গাছ। বড় ইটের ব্লকে পা রেখে দেখছি সেগুলো। একটা রঙ্গন ফুলের গাছের মাথায় নাচছে রঙিন প্রজাপতি। সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে যেতেই আমার পেছন থেকে দুজন দৌড়ে এসে পিছু নিল তার। ধাওয়া খেয়ে প্রজাপতি বেচারা তো উধাও। অগত্যা তাদের কাছেই জানতে চাইলাম, কার সঙ্গে এসেছ? স্কুল ড্রেস পরা দুই ভাইবোন জানাল, তারা এসেছে তাদের মায়ের সঙ্গে। তাদের মা নিলু আক্তার কিনছেন গাছ। তাঁর কেনাকাটার ফাঁকে দুই ভাইবোন দেখে বেড়াচ্ছে ফুল আর ফলের গাছ।
নিলু আক্তার জানালেন, বৃক্ষমেলায় প্রতি বছরই আসেন তিনি। গাছ কেনার তালিকায় প্রথমেই থাকে ইনডোর প্ল্যান্ট। খেয়াল করলাম, বেশ কিছু নার্সারিতে গাছের দামের পাশাপাশি যত্নের উপায়ও জেনে নিচ্ছেন তিনি। এক নার্সারি কর্মীর কাছে তিনি অভিযোগ জানালেন, গত বছর মেলা থেকে নিয়ে যাওয়া একটি অর্কিড মারা গেছে বলে। ফলে এবার তিনি সেগুলোর যত্ন বিষয়ে বেশ সতর্ক। কর্মীটির কাছে জানতে চাইলেন অর্কিড যত্নের উপায়। কর্মীটি পরামর্শ দিলেন কম পানি দেওয়ার। গাজি নার্সারির বিক্রেতা জানালেন, এবার মেলায় ইনডোর প্ল্যান্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে এবং আগের বারেও এটাই বেশি কিনেছিলেন ক্রেতারা। তাই বিভিন্ন আকারের মিডিয়াসহই গাছগুলো ডিসপ্লেতে রেখেছেন তাঁরা। অনেকে ঘরের জন্য কিনছেন, অনেকে আবার কিনছেন অফিস ডেস্কে রাখার জন্য।
মেলায় ঢুকেই খেয়াল করেছিলাম, বিভিন্ন প্রজাতির বনসাইয়ের যেন হাট বসেছে। মেলার যত ভেতরে যাচ্ছি, বনসাইয়ের সংখ্যা ততই বাড়ছে। মেলায় আসা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বনরূপা নার্সারিতে দেখা মিলল ২৬ বছর বয়সী এক তেঁতুল বনসাইয়ের। নার্সারির কর্মীটি জানালেন, এর দাম আড়াই লাখ টাকা। এখানেই পেয়ে গেলাম আমবট। এর দাম সত্তর হাজার টাকা। এই বনসাইগুলো যে শুধু মানুষ দেখেন, এমন নয়। অনেকে কিনে নিয়ে যান বাড়ির শোভা বাড়ানোর জন্য। আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টারের স্টলে রাখা বিশাল এক চায়না বটের বনসাই চোখে পড়ল। স্টলের দায়িত্বে থাকা কর্মী জানালেন, সেটির দাম সাত লাখ টাকা!
বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা মিলল নানান জাতের ও আকারের ক্যাকটাস। এগুলোর দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে এক বা দেড় হাজারের মধ্যে। এ ছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও বিদেশি গাছের চারা এনেছে অনেক নার্সারি।