গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী,
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী...।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গাঢ় সবুজ পাতা ছাড়িয়ে টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া আমাদের শহরে যেন জিয়নকাঠি। গরমে যখন নাভিশ্বাস, তখন খা খা রোদে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া দেখলে প্রশান্তি পাওয়া যায় খানিক। শেষ গ্রীষ্মের গরম কিছুটা হলেও ভুলে থাকা যায়। সে জন্যই মনে হয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছেন, ‘আজ কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে/ আকাশ খেলে হোলি/ কেউ জানে না সে কোন কথা/ মন কে আমি বলি...’।
যার আবির নিয়ে আকাশ হোলি খেলে সেই কৃষ্ণচূড়ার রূপ ও সৌন্দর্য এখন জায়গা করে নিয়েছে পোশাকে, গয়নায়, টিপে ও ব্যাগে। ফ্যাশনপ্রেমীরা ঋতুভিত্তিক পোশাকের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন ইতিমধ্যে। সেই সূত্রে আগুনঝরা গ্রীষ্মে ডিজাইনাররা পোশাকে কৃষ্ণচূড়া ফুলকে জায়গা করে দিয়েছেন। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, গয়না, টিপ কোথায় নেই প্রিয় ফুলটি, সেটাই এখন গবেষণার বিষয়।
সুতি, হাফসিল্ক, জামদানি ও মসলিন শাড়ি এবং পাঞ্জাবিতে মনের মতো করে ফুটিয়ে তুলছেন কৃষ্ণচূড়া। কেউ কেউ ব্যাগেও রং-তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন প্রিয় এ ফুল। কেউ কেউ হ্যান্ডপেইন্ট করছেন আবার কেউবা ব্লকের কাজ করছেন পোশাক ও বিভিন্ন অনুষঙ্গে।
অফহোয়াইট বা ঘিয়ে রঙের জমিনের ওপর টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়ার ছোপ। সরু পাড়েও কৃষ্ণচূড়া, তার সঙ্গে সবুজ বর্ডার। পুরো আঁচলও অফহোয়াইট বা ঘিয়ে রঙের জমিনে টকটকে লাল। কিংবা কালো জমিনে লাল কৃষ্ণচূড়া। এসব শাড়ি হচ্ছে এখন। গায়ে জড়াচ্ছেন তরুণীরা। সঙ্গে থাকছে ম্যাচিং করা ব্লাউজ, ব্যাগ বা অন্য কোনো অনুষঙ্গ। শুধু শাড়িই নয়, পাঞ্জাবি ও সালোয়ার-কামিজেও হ্যান্ডপেইন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে এ ফুলটিকে। ‘কল্পলোকের চিত্র’-এর স্বত্বাধিকারী তানজিনা রহমান অভি জানান, তাঁরা হাফসিল্কের শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নকশা করছেন। এই ফুলের প্রতি ভালো লাগা ও ক্রেতাদের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে এ সময় কৃষ্ণচূড়ার মোটিফে সাজাচ্ছেন শাড়ি ও পাঞ্জাবি।
নিজের ভালো লাগা ও ক্রেতাদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে পোশাকে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটিয়ে তুলছেন ‘রঙ্গিমা’র স্বত্বাধিকারী রুবানা করিমও। হাফসিল্কের শাড়ি, ওড়না, সুতি, বাটিক ও মসলিনের শাড়িতে কৃষ্ণচূড়া নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ‘দ্বিভুজে’ পাওয়া যাবে কৃষ্ণচূড়া ফুলের কামিজ ও শাড়ি। প্রকৃতির রূপ ও রঙে মুগ্ধ হয়েই পোশাকে প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তোলেন দ্বিভুজের স্বত্বাধিকারী আসমাউল হুসনা মৌ। তিনি বলেন, ‘আমরা হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করি। প্রকৃতিই আমাদের মূল অনুপ্রেরণা।’
গলার মালা, কানের দুল, আংটি, হাতের চুড়ি ও বালা ইত্যাদি বিভিন্ন গয়নায় স্থান করে নিয়েছে কৃষ্ণচূড়া। টকটকে লাল ও স্নিগ্ধ সবুজ রঙের মিশেলে তৈরি করা হচ্ছে সেসব গয়না। কাঠ কিংবা মাটি দিয়ে বানানো গয়নায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার আদল। গয়নার সৌন্দর্য বাড়াতে সুতা, বিডস ইত্যাদিও ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘রূপসা’র স্বত্বাধিকারী ঝুমকি বসু বলেন, ‘আমরা কাঠের গয়নায় রং-তুলির মাধ্যমে কৃষ্ণচূড়া ফুল ও এর পাতা ফুটিয়ে তুলেছি। এর সঙ্গে মালায় সুতার ব্যবহার করছি।’
কৃষ্ণচূড়ার এ ভরা মৌসুমে ডিজাইনাররা পোশাকে ফুটিয়ে তুলছেন এ ফুলটি। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, ব্লাউজসহ বিভিন্ন গয়না, হ্যান্ডব্যাগ ও অন্য়ান্য অনুষঙ্গে ব্লক ও হ্যান্ডপেইন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে এ ফুলটিকে।
অন্যান্য অনুষঙ্গে কৃষ্ণচূড়া
শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে একই ডিজাইন ও মোটিফের টিপ, খোপার কাঁটা ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও ফেসবুক পেজে। কেউ কেউ পাটের ব্যাগেও হ্যান্ডপেইন্ট ও ব্লকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন এ ফুল।
কোথায় পাবেন
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও মার্কেটে পেয়ে যাবেন কৃষ্ণচূড়া মোটিফের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, গয়না, টিপ ইত্যাদি। অনলাইন পেজ রূপসা, দ্বিভুজ, কল্পলোকের চিত্র, রঙ্গিমা, পদ্মপুরাণ, স্টুডিও র ইত্যাদিতে পেয়ে যাবেন পছন্দের পোশাক। রূপসায় শাড়ি ছাড়াও পাবেন গয়না, টিপ, খোঁপার কাটা ইত্যাদি।
দরদাম
এ ধরনের পোশাকের দাম হয় ফেব্রিকের ধরন অনুযায়ী। প্রতিষ্ঠান ও উপকরণের ভিন্নতার কারণে একই পোশাকের দাম কমবেশি হতে পারে। সাধারণত কামিজ ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। সোয়া গজ ভয়েল কাপড়ের ব্লাউজপিসের দাম ৩৭০ টাকা। রূপসা থেকে টিপ প্রতিটি ২৫ টাকা, খোপার কাঁটা প্রতিটি ১০০ টাকা করে, চুড়িসহ গলার মালা, কানের দুল, আংটির দাম ৭০০ টাকা এবং চুড়ি ছাড়া গলার মালা, কানের দুল ও আংটির দাম ৩৫০ টাকা।