যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে গত বছর নিজের চেনা-জানার সামাজিক পরিমণ্ডলটিকে আরেকটু বড় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জুলিয়েট সার্তোরি। আর তাই তিন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে এক কাপ কফির আড্ডায় মিলিত হন তিনি।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ২১ বছর বয়সী জুলিয়েট যুক্তরাষ্ট্রের তরুণী। স্কটল্যান্ডে তিনি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
তিনজন অপরিচিতের সঙ্গে কফি আড্ডার বিষয়ে জুলিয়েট বলেন, ‘এটি দারুণ একটি অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা দুই ঘণ্টা ধরে কথা বলেছিলাম এবং আজও আমরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি।’
বন্ধুত্বপূর্ণ এই ‘ব্লাইন্ড ডেট’ ছিল মূলত ‘ডিনার উইথ অ্যা স্ট্রেঞ্জার’ নামে একটি গ্রুপের আয়োজন। গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য জুলিয়েট এবং তাঁর সঙ্গী-সাথিরা এই গ্রুপের উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, নতুন মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া।
নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতেই জুলিয়েট লক্ষ্য করেছিলেন, এখানে মানুষের সঙ্গে সহজে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে না। তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যেন এক ধরনের দেয়াল ছিল।’ তা ছাড়া, বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তিতে এতটাই মগ্ন যে, মুখোমুখি যোগাযোগের সুযোগ অনেক কমে গেছে।
এ কারণেই ‘ডিনার উইথ অ্যা স্ট্রেঞ্জার’-এর যাত্রা শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে জুলিয়েট বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো ৩০ জন এই গ্রুপে যোগ দেবে। কিন্তু আমরা জানতাম না, আসলে কী হবে। এটি একটু অদ্ভুত ধরনের উদ্যোগ ছিল এবং নামটি অনেককেই বিভ্রান্ত করেছিল।’
শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, প্রথম মাসেই ওই গ্রুপে নারী, পুরুষ, নন-বাইনারি সহ অন্ত ২০০ জন শিক্ষার্থী ওই গ্রুপে যোগ দিলেন। এরপর থেকে গ্রুপটি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
জুলিয়েটের এই বন্ধুত্বের আয়োজন প্রচলিত ডেটিং অ্যাপের ধারণা থেকে কিছুটা ভিন্ন। এখানে রোমান্টিক সম্পর্কের বদলে মূলত বন্ধুত্ব গড়ে তোলার দিকেই জোর দেওয়া হয়।
এই গ্রুপে কোনো জটিল অ্যালগরিদমও ব্যবহার করা হয় না। বরং প্রতি মাসের শুরুতে অনলাইনে সদস্যদের একটি প্রশ্নোত্তর ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয়। প্রশ্নগুলো সাধারণত হয় এমন—আপনি কোন ধরনের সংগীত পছন্দ করেন? সবচেয়ে প্রিয় ডিজনি সিনেমা কোনটি? বা ছুটি পেলে আপনার স্বপ্নের গন্তব্য কোথায়?
এরপর জুলিয়েট এবং আরও পাঁচজন মিলে কয়েক ঘণ্টা ধরে প্রশ্নোত্তর দেখে দেখে সবাইকে জুটি বানানোর কাজ করেন। পরে যোগাযোগের তথ্য ভাগাভাগি করে সেই ব্যক্তিদের নিজেদের মতো করে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ করে দেন।
জুলিয়েটের সহযোগীদের একজন মেরি ইয়োরকাজি। সাইপ্রাস থেকে পড়তে আসা ২২ বছরের এই তরুণী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুত্ব গড়া আমার জন্যও চ্যালেঞ্জ ছিল। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা মানুষের সঙ্গে মিশতে ভয় হতে পারে। মনে হতে পারে, মানুষ আপনাকে বুঝবে না।’
মেরি বিশ্বাস করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধুত্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মানুষ এখন অন্যদের জীবন দেখে নিজেদের তুলনা করে এবং এতে একাকিত্ব বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম অনেক বেশি একাকী।’
ডিনার উইথ অ্যা স্ট্রেঞ্জার-এর মাধ্যমে গত ডিসেম্বরে বন্ধুত্ব হয়েছিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ভানিয়া ও হান্নাহর মধ্যে। এখন তাঁরা পরস্পরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। শুধু তাই নয়, তাঁরা এখন রুম-মেট।
ম্যানচেস্টারের ২০ বছর বয়সী হান্নাহ বলেন, ‘সমাজ রোমান্সকে এত গুরুত্ব দেয় যে, আমরা ভুলে যাই বন্ধুত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি জানান, ভানিয়ার সঙ্গে দেখা করার আগে তিনি ছিলেন খুবই বিষণ্ন এবং অনেক সময় একা কাটাতেন। এখন তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো এবং তিনি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
জুলিয়েট মনে করেন, এটি আসলে বন্ধুত্ব তৈরির একটি আধুনিক উপায়। তিনি বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে এটি আরও জনপ্রিয় হবে।