হোম > জীবনধারা

রোজায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা 

মো. ইকবাল হোসেন 

ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজসমৃদ্ধ খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও পরিচিত একটি ফল। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই শরীর চাঙা রাখতে খেজুর খুব কার্যকরী। তবে আমাদের দেশে শুধু রোজার সময়েই নিয়মিত ইফতারে খেজুর খাওয়া হয়।

ডায়াবেটিস রোগীরা কি খেজুর খেতে পারবে
ডায়াবেটিস রোগীরাও খেজুর খেতে পারবে। খেজুর যেহেতু ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজসমৃদ্ধ ফল, তাই তাদের পরিমিত পরিমাণে খেজুর খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যসকালে বা মধ্যবিকেলে যে হালকা নাশতা থাকে, সে নাশতার সঙ্গে দুই-তিনটা খেজুর খেতে পারবে। উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটু বেশি হওয়ার কারণে, অতিরিক্ত খেজুর খেলেই ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে যাবে। 

সারা দিন রোজা রাখার ফলে রক্তে চিনির স্তর বেশ কমে যেতে পারে। তখন ইফতারে সরাসরি কোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার না খেয়ে দুই-তিনটি খেজুর খেলে চিনির স্তর খুব ধীরে ধীরে বাড়বে। এর ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

খেজুর খাওয়ার নিয়ম
অন্য আর সব ফলের মতোই খেজুর ফল হিসেবে খেতে হয়। মধ্যসকাল বা মধ্যবিকেলে নাশতার সঙ্গে খেজুর খাওয়া যায়। তবে খেজুর শর্করাসমৃদ্ধ। এ ছাড়া এতে কিছু প্রোটিন ও চর্বি আছে। ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর হওয়ায় এটি প্রধান খাবারের পরিবর্তেও খাওয়া যায়। অর্থাৎ সকাল বা রাতের প্রধান খাবারের পরিবর্তে পরিমাণমতো খেজুর খেলেও আপনি শারীরিকভাবে দুর্বল হবেন না। তবে রোজার সময়ে ইফতার ও সাহরি দুই সময়েই খেজুর খাওয়া যাবে। এতে পানিশূন্যতার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।

সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে খেজুর খেলে বিশেষ কোনো উপকারিতা আছে বলে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। তবে অন্যান্য ফল খালি পেটে খেলে কিছুটা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। কিন্তু খেজুরে সে ঝুঁকি নেই। ইসলামিক হাদিস অনুযায়ী, সকালে খেজুর খাওয়া উত্তম।

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা 
⦁    খেজুরে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে, তাদের জন্য খেজুর খুব উপকারী।
⦁    রমজানে সারা দিন রোজা রাখার ফলে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। তাই ইফতারে দু-তিনটি খেজুর শারীরিক দুর্বলতা দূর করবে। খেজুর শরীরের শক্তি বুস্টার হিসেবে কাজ করবে।      শুধু রোজার কারণে শারীরিক দুর্বলতা নয়। যেকোনো কারণে শারীরিক দুর্বলতায় খেজুর শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। 
⦁    খেজুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ঠান্ডা ও কাশিজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। 
⦁    বেশি আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এটি। সেই সঙ্গে শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করবে।
⦁    খেজুরে পটাশিয়াম বেশি থাকায় এটি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
⦁    খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল আছে। প্রতিদিন শরীরের ক্ষয় রোধ করতে খেজুর খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
⦁    খেজুর আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তের কোলেস্টেরল, টাইগ্লিসারাইড, এলডিএল বা খারাপ চর্বি কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ভালো চর্বি বাড়ায়। 
⦁    প্রতিদিন খেজুর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
⦁    বাড়ন্ত শিশুদের খাবারে প্রতিদিন ২-৩টি খেজুর রাখলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়। ফলে শারীরিক বৃদ্ধি ভালো হয়।
⦁    গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী মায়ের আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ সব ধরনের মিনারেলের ঘাটতি পূরণে খেজুর অতুলনীয়।

খেজুরের অপকারিতা 
আসলে খেজুরের তেমন কোনো অপকারী বা ক্ষতিকর দিক নেই। তবে কিছু কিছু রোগের জন্য এটি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। যেমন কিডনি রোগীদের জন্য খেজুর উপযোগী নয়। তাই কিডনিজনিত জটিলতায় ভুগলে খেজুর খাবেন না। আবার ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিত পরিমাণে খেজুর খেতে হয়। অতিরিক্ত খেলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। 
 
পুষ্টিমানে ভরপুর খেজুর
বাজারে অনেক ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। তবে পুষ্টিগুণ, স্বাদ, গন্ধ এবং অন্যান্য দিক বিবেচনা করলে আজওয়া খেজুর অন্যান্য খেজুরের চেয়ে ভালো।

কাঁচা খেজুর
কাঁচা ও পাকা খেজুরের মাঝে একটাই প্রধান পার্থক্য থাকে। সেটা হলো মিষ্টির পরিমাণ। পাকা খেজুরে মিষ্টি বা চিনির পরিমাণ একটু বেশি থাকে। কাঁচা খেজুরে চিনির পরিমাণ কিছুটা কম থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পাকা খেজুরের চেয়ে কাঁচা খেজুর বেশি উপযোগী।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভকালে প্রতিটি নারীর খাবারের সঙ্গে অন্যান্য ভিটামিন-মিনারেলে চাহিদাও কিছুটা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম। খেজুরের উপাদানগুলো লক্ষ করলে দেখা যায়, খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আছে। গর্ভকালে নারীদের শরীরে এ উপাদানগুলোর ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা ঘটে। তখন কিছু জটিলতা দেখা দেয়। এ ছাড়া অনেক নারীর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ দেখা যায়। খেজুরের পটাশিয়াম সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। 

এ ছাড়া গর্ভকালের একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। অন্যান্য যেকোনো ফলের চেয়ে খেজুরে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি। তার পরিমাণ প্রায় ৮ শতাংশ। এই আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার।

খেজুর ও শসা
ইফতারে শসা ও খেজুর একত্রে খাওয়ার কিছু উপকারী দিক আছে। রোজায় সারা দিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। শসায় পানির পরিমাণ অনেক বেশি, যা শরীরে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যদিকে খেজুরের আঁশের শরীরে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা অনেক বেশি। এটিও পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে। 

অর্থাৎ শসা শরীরে পানি সরবরাহ করে আর খেজুর সেটা ধরে রাখে। এভাবে শসা ও খেজুর পানিশূন্যতা থেকে মুক্তি দিয়ে দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে সহায়তা করে। তাই সাধারণ সময় ছাড়াও, আমাদের উচিত বিশেষ করে রোজায় সাহরি ও ইফতারে কিছু শসা ও খেজুর রাখা।

খেজুরের প্রধান উপাদান

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরের পুষ্টিমান

ক্যালরি ৩০০ কিলোক্যালরি
শর্করা   ৭৫.০৩ গ্রাম
প্রোটিন ২.৫ গ্রাম
চর্বি     ০.৩৯ গ্রাম
খাদ্য আঁশ ৮ গ্রাম

ভিটামিন
বিটা-ক্যারোটিন     ৬ মাইক্রোগ্রাম 
ভিটামিন এ          ১০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট
থায়ামিন (বি১)      ০.০৫২ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি২) ০.০৬৬ মিগ্রা
নায়াসিন (বি৩)      ১.২৭৪ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫)০.৫৮৯ মিগ্রা
ভিটামিন বি৬        ০.১৬৫ মিগ্রা
ফোলেট (বি৯)       ১৯ মাইক্রোগ্রাম 
ভিটামিন সি          ০.৪ মিগ্রা
ভিটামিন ই           ০.০৫ মিগ্রা
ভিটামিন কে         ২.৭ মাইক্রোগ্রাম 

খনিজ
ক্যালসিয়াম          ৩৯ মিগ্রা
আয়রন               ১.০২ মিগ্রা
ম্যাগনেশিয়াম     ৪৩ মিগ্রা
ম্যাংগানিজ         ০.২৬২ মিগ্রা
ফসফরাস          ৬২ মিগ্রা
পটাশিয়াম         ৬৫৬ মিগ্রা
সোডিয়াম          ২ মিগ্রা
জিংক              ০.২৯ মিগ্রা

শুধু রোজার মাস নয়, পুরো বছরই প্রতিদিন অন্তত দুটি করে খেজুর আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।

লেখক: পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল 

দর্শন রাভালের পছন্দ কোয়ার্কি স্টাইল

এ বছরের ফ্যাশন ট্রেন্ড

চুল পড়া রোধে

অনলাইন থেকে কেনাকাটা হোক সচেতনভাবে

গয়নায় অ্যালার্জি হলে

এক স্টাইলে দুই প্রজন্ম

দর্শন রাভালের বিয়ের সাজ

পিৎজার দাম ১৫ হাজার টাকা

নেপালে অ্যাডভেঞ্চার বাঞ্জি জাম্পিং ও প্যারাগ্লাইডিংয়ের রোমাঞ্চ

রোমাঞ্চকর রেইছা ঝিরির পথে

সেকশন