এই ফিউশন ফ্যাশনের যুগে কোনটা কী, তা ভেবে কখনো কখনো কনফিউশন তৈরি হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো কনফিউশন নেই যে নারীরা শাড়ি পছন্দ করে। আর বিষয়টি যদি হয় শাড়িতে ফিউশনের, তাহলে তো কথাই নেই। শাড়ির জগতে এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে ডেনিম শাড়ি।
প্যান্ট, ব্লেজার, শার্ট, জুতা, ব্যাগ আর ঘড়ির ফিতার গণ্ডি পেরিয়ে ডেনিম এবার শাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। কাজটি দারুণভাবে করেছেন আফরিন আহমেদ।
ডেনিম শাড়ির প্রচলন
ডেনিম শাড়ির ধারণাটি ভারতীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম প্রচলিত হয়। সে দেশের কিছু ফ্যাশন হাউস এবং আনামিকা খান্না বা মাসাবা গুপ্তার মতো ডিজাইনার ডেনিমকে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালান। তাঁদের হাত ধরে শাড়ির ফিউশন স্টাইল হিসেবে ডেনিম শাড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতীয় ব্র্যান্ড আনারকলি এবং ফ্যাবইন্ডিয়ার মতো ব্র্যান্ডগুলোও ডেনিম শাড়ি প্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা ঐতিহ্যবাহী শাড়িকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার জন্য পাতলা ডেনিম কিংবা ডেনিমের মতো দেখতে কাপড় ব্যবহার করে ফিউশন তৈরি করেছে। এ ধরনের শাড়ি আধুনিক ফ্যাশনপ্রেমী নারীদের মধ্যে দ্রুততম সময়ে জনপ্রিয়তা পায়। আমাদের দেশে ডেনিম শাড়ির ধারণা এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন এবং অপ্রচলিত।
আফরিনের যাত্রা
ভারতীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে ধারণা নিয়ে অন ক্লাউড নাইন অ্যান্ড হাফ পেজের উদ্যোক্তা আফরিন আহমেদ গত বছরের নভেম্বরে এনেছেন ডেনিমের শাড়ি। এ শাড়ির বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, এতে পশ্চিম ও পূর্বের ফ্যাশনের সংমিশ্রণ ঘটেছে। ঐতিহ্যবাহী শাড়ির একটি নতুন রূপ হিসেবে ফ্যাশন দুনিয়ায় স্থান করে নিচ্ছে ডেনিম শাড়ি। এটি একুশ শতকের প্রথম দশকের শুরুতে ফ্যাশনের জগতে প্রবেশ করে।
নিরীক্ষামূলক ও ফিউশনধর্মী কাজ আফরিনের স্বচ্ছন্দের জায়গা। সেখান থেকে ডেনিম শাড়ি নিয়ে কাজ করার চিন্তা শুরু করেন তিনি। আমাদের দেশে ডেনিম জ্যাকেট, ক্রপটপ, পাঞ্জাবি, প্যান্ট ইত্যাদি অনেক কিছুই পাওয়া যায়; কিন্তু শাড়ি পাওয়া যায় না। আবার শীতকালে অনেকে শাড়ি পরে তার ওপরে শাল চাপাতে চান না শাড়ির ডিজাইন দেখা যাবে না বলে। এরপর আফরিনের মাথায় আসে, তাহলে এমন একটা শাড়ি তিনি তৈরি করবেন, যেটি শীতের জন্য পরলে ওপরে শাল না চাপালেও চলবে। এরপরেই তিনি ডেনিম শাড়ি তৈরি শুরু করেন।
ডেনিমের জমিনে কাজের ধরন
জমিন আর আঁচলজুড়ে ব্লকপ্রিন্ট। সঙ্গে পাইপিং। উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে কিছুটা নিষ্প্রভ রং ব্যবহার করে ব্লকের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে প্রিন্ট ছাপিয়ে ডেনিম কাপড়টাই বেশি চোখে পড়ে। আফরিন জানান, শাড়ি তৈরিতে সফট ডেনিম ব্যবহার করা হয়েছে, যেন এগুলো পরে সবাই আরাম পায়। তা ছাড়া এতে শাড়িও হয়েছে তুলনামূলক কম ওজনের। এ কারণে হয়তো তাঁর পেজের বেশি বিক্রীত ডেনিম পণ্য এই শাড়ি আর ব্লাউজ। আফরিন শুধু শাড়িই নয়, ডেনিম দিয়ে তৈরি করেন কুর্তা, কামিজ, কো অর্ড ও টপ।
আফরিনের স্বপ্ন
জীবনের শোনা ও দেখা কিছু ছোট ছোট গল্প থেকে আফরিন শিখেছেন, নতুন করে শুরু করার কোনো বয়স বা সময় নেই। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবাই নিজের স্বপ্ন পূরণ করার মতো ভাগ্যবান নয়। এ সুযোগ হলে পূরণ করা উচিত।’ তিনি একজন ডার্মাটোলজিস্ট। তবে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন আফরিন।
স্বামীর পোস্টডক্টরালের সময় তাঁর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তিনি। সেখানে কাজ করার অনুমতি না থাকায় ঘরে বসে ক্র্যাফটিং করতেন আফরিন। সেখানেই মিশিগানের এক বিখ্যাত গয়না নির্মাতার কাছে ট্রেনিং নেন। দেশে ফিরে গয়না বানানো শুরু করলেও তেমন সাড়া মেলেনি সে সময়। কারণ, আফরিন তৈরি করতেন মূলত ওয়েস্টার্ন ধাঁচের গয়না। সে ধরনের গয়না পরার প্রচলন তখনো শুরু হয়নি আমাদের দেশে। এরপর ধীরে ধীরে গয়না ছেড়ে পোশাক তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন আফরিন। তাঁর ক্রেতাদের একটা বড় অংশ প্রবাসী। তারা ডেনিম শাড়ি সাদরে গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন আফরিন। তবে দেশের অনেক ক্রেতাও ডেনিম শাড়িকে সাদরে গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি জামদানি স্যুভেনির নিয়ে কাজ শুরু করেছেন আফরিন। বছরে অন্তত পাঁচটা একেবারে ইউনিক ডিজাইন তৈরি করতে চান। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন একটি ফ্ল্যাগশিপ স্টোরের স্বপ্ন দেখছেন আফরিন আহমেদ।