হোম > জীবনধারা > ফিচার

চীনা নববর্ষ: লাল রং আর লণ্ঠন যেভাবে উদ্‌যাপনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠল

ফিচার ডেস্ক

চীনা নববর্ষের ইতিহাস ৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। ছবি: এএফপি

ঈদের সালামি দেওয়ার রীতি আছে আমাদের দেশে। আর চীন দেশে আছে লাল খামে অর্থ উপহার দেওয়ার রীতি। লাল বসন্তের রং, হলুদ রঙের মতোই। শীতের শেষে চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসারে চীন দেশে নতুন বছর শুরু হয়। ফলে এটি পালিত হয় একই সঙ্গে নববর্ষ এবং বসন্ত উৎসব হিসেবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি চীনের সবচেয়ে বড় উৎসব। আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে এই উৎসব।

চীনা নববর্ষের ইতিহাস ৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। এটি শুরু হয়েছিল চীনের প্রাচীন কৃষি ভিত্তিক সমাজে। দেবতা এবং পূর্বপুরুষদের সম্মান, ভালো ফসলের জন্য প্রার্থনা এবং মন্দ আত্মা তাড়ানোর সামাজিক প্রথা থেকে এ উৎসবের সূচনা। প্রায় ১৫ দিন ধরে চলা এ উৎসবের মূলে থাকে পরিবার। নিয়ান নামে একটি পৌরাণিক জন্তুর কিংবদন্তি এই উৎসবের কেন্দ্রীয় বিষয়। নববর্ষের পরিচিত প্রতীক লাল রং।

চীনারা বিশ্বাস করেন, লাল রং সৌভাগ্য, সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক। তাই নববর্ষের উৎসব শেষ হয় লাল ল্যান টার্ন বা লণ্ঠন উৎসবের মধ্যে দিয়ে। চন্দ্র পঞ্জিকার ১৫তম দিনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের সজ্জা ও পোশাকসহ সবকিছুতেই থাকে লালের ছোঁয়া।

ভয়ংকর প্রাণী নিয়ন প্রতি বছর শীতের শেষে গ্রামে গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করত। এর হাত থেকে বাঁচতে মানুষ আগুন জ্বালাত, বিকট শব্দ তৈরি করতে তারা বাজি ফাটাত। আর লাল কাপড় পরত এবং লাল রঙে বাড়ি সাজাত। এসব কারণেই আতশবাজি এবং তোরণ পেটানো চাইনিজ নববর্ষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এগুলোকে এখন দুষ্টু আত্মাদের তাড়িয়ে দিয়ে সৌভাগ্য আনার প্রতীক মনে করা হয়।

যেকোনো উৎসবের মতো চাইনিজ নিউ ইয়ারেও খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ উৎসবে খাওয়া প্রায় প্রতিটি খাবারের মধ্যে সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য এবং সুখের প্রতীকী অর্থ লুকিয়ে থাকে। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের খাবার খাওয়া হয়। যেমন, উত্তর চীনে জিয়াওজি খাওয়া হয়। এ খাবারকে সে অঞ্চলের মানুষেরা সমৃদ্ধি ও অমঙ্গল তাড়ানোর প্রতীক মনে করে। আবার দক্ষিণ চীনে নিনগাও খাওয়া হয়। এটি প্রগতি এবং উন্নতির প্রতীক। এ উৎসবের জনপ্রিয় খাবার মাছ। চীনা ভাষায় এর উচ্চারণ শোনায় ‘অবশ্য’ শব্দটির মতো। অবশ্য শব্দটি চীন দেশে প্রাচুর্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এ উৎসবে সাধারণ ভাবে জিয়াওজি ডাম্পলিং, তাংইউয়ান বা মিষ্টি গ্লুটিনাস রাইস বল এবং কিং ঝেং ইউ বা স্টিমড ফিশ খাওয়া হয়।

চীনা নববর্ষের ইতিহাস ৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। ছবি: এএফপি

চীনা নববর্ষের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে পরিবার। ইউরোপীয়দের মতো চীনাদেরও আছে নিউ ইয়ার ইভ ডিনার বা পুনর্মিলনের খাবার। পরিবারের মানুষেরা কর্ম উপলক্ষে যেখানেই থাকুক না কেন নতুন বছরের আগের দিন বাড়ি ফিরে রাতে একসঙ্গে খাবে। এ রীতির কারণে নিউ ইয়ার ইভ ডিনার নববর্ষ উদ্‌যাপনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এ সময় একসঙ্গে পরিবারের সদস্যরা মিলিত হয়ে পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানায় এবং পারিবারিক একতার উদ্‌যাপন করে। বছর শেষে পরিবারের সবাই একসঙ্গে হওয়ার জন্য এই যাত্রার নাম চুনিউন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবিক অভিবাসন, যেখানে কোটি কোটি মানুষ এই সময় ভ্রমণ করে।

চীনা নববর্ষের ইতিহাস ৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। ছবি: এএফপি

আগেই বলেছি, চীনা নববর্ষের উৎসব শেষ হয় চন্দ্র পঞ্জিকার ১৫তম দিনে ল্যান টার্ন বা লণ্ঠন উৎসবের মধ্যে দিয়ে। এ উৎসবে মানুষ রঙিন ল্যান টার্ন জ্বালায়, ডাম্পলিংয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার খায়, ল্যান টার্ন ধাঁধা এবং প্যারেডে অংশ নেয়। এটি একই সঙ্গে নববর্ষ উৎসবের সমাপ্তি এবং বসন্তের আগমন চিহ্নিত করে।

চীন দেশের এ নববর্ষ উদ্‌যাপন শুধু অতীতকে সম্মান জানাতে নয়, বরং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকানোরও সময়।

চীনা নববর্ষের ইতিহাস ৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। ছবি: এএফপি

বলে রাখা ভালো, চীনা নববর্ষ হলেও এটি শুধু চীনেই উদ্‌যাপিত হয় এমন না। বরং এর সাংস্কৃতিক প্রভাব আছে কোরীয় নববর্ষ, ভিয়েতনামের টেট এবং তিব্বতের লোসারসহ চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোর নববর্ষ উদ্‌যাপনেও। এটি সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন এবং মরিশাসসহ উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের যেসব দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চীনা নাগরিক বসবাস করেন, সেসব দেশেও উদ্‌যাপিত হয়।

অনলাইন থেকে কেনাকাটা হোক সচেতনভাবে

শখের জিনিসে টাকা অপচয় হচ্ছে না তো

আপনি কি সিঙ্গেল? এভাবে উপভোগ করুন বছরের শেষ ছুটির দিনগুলো

৩০ বছর পার করল ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ

কী খাচ্ছি, দারুচিনি নাকি সিনামন

আরামের ঘুমের জন্য যা করতে পারেন

কর্মস্থলে জেনারেশন জি’র আচরণ নিয়ে তুমুল বিতর্ক

জাপানে স্কুলপড়ুয়া ছেলেদের প্রথম চুম্বনের অভিজ্ঞতা ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে

শীতপোশাকে রঙের হাওয়া

এশিয়ার সবচেয়ে যোগ্য পাত্রকে বিয়ে করলেন, কে এই নারী

সেকশন