হোম > জীবনধারা > ফিচার

একাকিত্ব কাটাতে জাপানের বৃদ্ধাশ্রমে শিশুদের নিয়োগ

অনলাইন ডেস্ক

আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫১

জাপানের বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে বাসিন্দাদের একাকিত্ব কাটাতে অভিনব এক উপায় বের করা হয়েছে। বয়স্কদের সঙ্গ দিতে ও তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যতিক্রমী সব কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে জাপান। এই ব্যতিক্রমী কর্মীরা হলো অনূর্ধ্ব তিন বছরের শিশু।

বেতনে তাদের দেওয়া হচ্ছে বেবি ফর্মুলা ও ডায়পার এবং মনমতো কাজে আসার সুযোগ। 

নিঃশব্দ বৃদ্ধাশ্রম যেখানে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই শোনা যায় না, সেখানে এখন শিশুদের ছোট ছোট পায়ের পদধ্বনি, আধো আধো কথা আর হাসির শব্দে মুখর হয়ে থাকে। বয়স্ক বাসিন্দা, যাদের নিজের নাতি-নাতনিরা তাদের দেখতে খুব কমই আসে, তাদের দিন উজ্জ্বল করার জন্য এই শিশুকর্মীদের নিয়োগ করা হয়। 

জাপানের এমনই এক বৃদ্ধাশ্রম ইকোয়ান নার্সিং হোম, যেখানে শ খানেক বয়স্ক মানুষের বাস। ১৮ মাস বয়সে সেখানে প্রায় প্রতি সপ্তাহে যেত রেনা শিনোহারা। হাসিমুখে ভবনের প্রত্যেক দরজায় ছুটে বেড়িয়ে বাসিন্দাদের মুখে হাসি ফোটাত সে। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৯৩ বছর বয়সী তাতসু ওজিরো বলেন, ‘তাদের দেখে আমি দারুণ উৎসাহ পাই, এটি সত্যিই আমাকে ভালো থাকতে সাহায্য করে।’ 

আরেক বাসিন্দা আতসুকো ওকামুরা বলেন, ‘তারা যখন আসে, তারা খুব আদুরে হয়।’ 

শিশুদের উপস্থিতি বার্ধক্যের সঙ্গে প্রচলিত বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিকে সহজ করে তোলে। বিশেষত জাপানের মতো দেশে, যেখানে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরই বয়স ৬৫ বছরের বেশি, সেখানে বেশির ভাগ বয়স্ককেই এই একাকিত্বের মধ্যে থাকতে হয়। ২০২২ সালে জাপান সরকারের এক জরিপে উঠে এসেছে, দেশটির ৪০ শতাংশ মানুষই একাকিত্বে ভোগে। 

২০২১ সালে জাপান সরকার প্রথম ‘একাকিত্বের মন্ত্রী’ নিয়োগ করে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পরে সব বয়সের মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। 

নার্সিং হোমটির পরিচালক কিমি গনডো বলেন, চার বছর আগে তাঁর নাতনি নার্সিং হোমে আসার পর সবার মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়া দেখে তাঁর মাথায় শিশুকর্মী নিয়োগের ভাবনা আসে। তিনি বলেন, ‘যখন আমি বয়স্কদের হাসতে দেখলাম, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে শিশুদের শক্তি কত। একটি শিশুকে ঘুরে বেড়াতে দেখেই তারা হাসে আর কথা বলতে শুরু করে।’ 

নার্সিং হোমটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৭০টি শিশুকর্মী ছিল। 

রেনার মা কানায়ে শিনোহারা বলেন, ‘এটা বেশ মজার ব্যাপার, আমার কোনো চাকরি নেই। কিন্তু রেনার আছে।’ প্রায় দুই বছর আগে শিনোহারা পরিবার জাপানের কিউশু দ্বীপে আসে। নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য রেনার মা তাকে নার্সিং হোমে নিয়ে আসে। 

শিনোহারা বলেন, ‘এখানে রেনা তার বয়সের শিশু এবং দাদা-দাদিদের সঙ্গে দেখা করতে পারে।’ দাদা-দাদির সঙ্গ সহজে পাওয়া যায় না উল্লেখ করে নার্সিং হোমটির বাসিন্দাদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা জীবন সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞ।’ 

রেনা আর তার অন্য খুদে সহকর্মীরা ইচ্ছামতো বৃদ্ধাশ্রমে আসে, সময় কাটায়। তবে তাদের এই চাকরি তিন বছর বয়স পর্যন্তই। 

এ শিশুদের নিয়োগ দেওয়ার উল্লেখযোগ্য একটি কারণ—এরা কথা বলতে পারে না। গনডো বলেন, বয়স্ক মানুষদের কথা বলতে ও যোগাযোগ করতে বেশ কষ্ট হয়। বিশেষ করে অনেকের বোধশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘একই রকম যোগাযোগের জন্য শব্দ প্রয়োজন।’

বৃদ্ধাশ্রমে শিশুদের নিয়োগের বিষয়টি বেশ ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে দূর থেকেই শিশুদের দেখে হাসেন, কেউ কেউ শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে হুইলচেয়ার ঠেলে এগিয়ে আসেন। 

গনডো বলেন, ‘যারা বেশি কথা বলেন না, বেশি হাসেন না বা নড়াচড়া করতে পারেন না, শিশুদের দেখলে তাঁদেরও মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।’

শখের জিনিসে টাকা অপচয় হচ্ছে না তো

আপনি কি সিঙ্গেল? এভাবে উপভোগ করুন বছরের শেষ ছুটির দিনগুলো

৩০ বছর পার করল ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ

কী খাচ্ছি, দারুচিনি নাকি সিনামন

সেকশন