বৃষ্টি মানেই পাহাড়ি ঝরনার প্রাণ ফিরে পাওয়া। বৃষ্টিস্নানে অপরূপ সাজে সেজে ওঠে পাহাড়ি জনপদ। প্রাণ খুলে হাসির ঝিলিক ছড়ায় পাহাড়ের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা ঝরনাগুলো। খাগড়াছড়ি জেলায় লুকিয়ে আছে অজানা অনেক ঝিরি ও ঝরনা। সঙ্গে আলুটিলা গুহা, জেলা পরিষদ পার্ক, দেবতা পুকুর, বনবিহার ও শান্তিপুর অরণ্য কুটির।
ঢাকা থেকে রাতের যাত্রাটা সকালে গিয়ে শেষ হলো খাগড়াছড়ি শাপলা চত্বরে। সকালের নাশতা শেষে চান্দের গাড়িতে ছুটতে থাকলাম রিছাং ও রিব্রাং ঝরনার উদ্দেশে।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত মায়াবী ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক ঝরনা রিছাং। জেলা শহর থেকে ১১ এবং আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে রিছাং ঝরনা। এর একটু নিচেই লুকিয়ে আছে আরেক ঝরনা। পাহাড়ি লোকজন তাকে রিব্রাং নামে ডাকলেও পর্যটকদের কাছে এটি অপু ঝরনা নামে পরিচিত। রিব্রাংয়ের বাংলা অর্থ জলপ্রপাত।
শিল্পীর কারুকাজের মতো সৌন্দর্য ফুটিয়ে পর্যটকের হৃদয় মন আকর্ষণ করে চলেছে রিছাং। মূল রাস্তার পাশেই রিছাং ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা। একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেছে পাহাড়ি বুনো পথ। হাঁটার গতির সঙ্গে ঝরনার পানি ছলছল শব্দ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি বেয়ে রিছাংয়ের কাছাকাছি যাওয়া গেল। লোকজনের কোনো কমতি নেই। মনে হলো, যাঁরা ভ্রমণে খাগড়াছড়ি আসেন, তাঁরা একে না দেখে ফেরেন না। কিছু হইহুল্লোড় আর ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম রিব্রাং দেখতে যাওয়ার। যেই কথা সেই কাজ।
প্রায় ৬০ মিটার উঁচু থেকে পানি পড়ছে। মায়াবী এক পরিবেশ, কোনো পর্যটক নেই। মহা খুশিতে উৎফুল্ল আমরা। প্রচুর মানুষের স্নানজনিত চিৎকার-চেঁচামেচিতে রিছাং ঝরনায় যাঁরা আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি, তাঁরা নিশ্চিত প্রশান্তি পাবেন রিব্রাং বা অপু ঝরনা দর্শনে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় স্থানীয় অধিবাসীরা ছাড়া এখানে তেমন পর্যটক আসেন না। একদম নিরিবিলি। ঝরনার কাছে গেলেই দেখবেন এক পাশে ওপর থেকে ঝিরঝির শব্দে নেমে আসছে রিব্রাং ঝরনার জলধারা, আরেক পাশে পাথরের খোলা উদ্যান। এর তিন দিক উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। অদ্ভুত সুন্দর সেই প্রকৃতি! ঝরনার কাছে যাঁদের ক্যাম্পিং করে রাত কাটানোর ইচ্ছে, তাঁরা এখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন। অর্জন হবে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা।
কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। এরপর সারা দিনের জন্য চান্দের গাড়ির ভাড়া করতে হবে কিংবা মোটরসাইকেল। চান্দের গাড়ির ভাড়া পড়বে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেলের ভাড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
থাকা ও খাওয়া
খাগড়াছড়ি শহরে বিভিন্ন ধরনের থাকার হোটেল আছে। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। খাগড়াছড়ি শহরেই পাওয়া যাবে রেস্তোরাঁ। সেগুলোতেই খেতে হবে।