হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি হিসেবে পরিচিত হলেও এটি লেখক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি নয় কিন্তু। বরং বাড়িটি ব্যাপকভাবে পরিচিত রোজ গার্ডেন হিসেবে।
ঋষিকেশ দাস ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ধনী ব্যবসায়ী। তবে সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসায় ঢাকার খানদানি পরিবারগুলো তেমন পাত্তা দিত না তাঁকে। কথিত আছে, একবার তিনি জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর বাগানবাড়ি বলধা গার্ডেনের এক জলসায় গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। এরপরই তিনি এক পেল্লায় প্রাসাদ তৈরির উদ্যোগ নেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৩১ সালে একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন ঋষিকেশ দাস। বাগানে প্রচুর গোলাপগাছ থাকায় এর নাম হয় রোজ গার্ডেন। ভবনটি সেজে ওঠার আগেই ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যান। ১৯৩৭ সালে তিনি রোজ গার্ডেন প্যালেসটি খানবাহাদুর আবদুর রশিদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। প্রাসাদটির নতুন নামকরণ হয় রশিদ মঞ্জিল। মৌলভি কাজী আবদুর রশিদ মারা যান ১৯৪৪ সালে। তাঁর মৃত্যুর পর রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তাঁর বড় ছেলে কাজী মোহাম্মদ বশীর ওরফে হুমায়ূন সাহেব। এ কারণে ভবনটি ‘হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয়। ‘হারানো দিন’ নামের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের শুটিং এই বাড়িতে হয়েছিল।
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গেও এ ভবনের যোগাযোগ আছে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলন হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ তথা আজকের আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতে মামলা করে ১৯৯৩ সালে মালিকানা স্বত্ব ফিরে পান কাজী আবদুর রশিদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে তিনি মারা যান। এর পর থেকে এটি তাঁর স্ত্রী লায়লা রকীবের মালিকানায় রয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার ভবনটি কিনে জাদুঘর বানানোর জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে।
এসব ইতিহাসের সাক্ষী হতে যেকোনো দিন যেতে পারেন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে যাত্রাবাড়ী অথবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে রিকশায় খুব সহজেই রোজ গার্ডেনে যাওয়া যায়।