সংবাদকর্মী-মানবাধিকারকর্মী তথা নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের অধিকারের ক্ষেত্রে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে, যা গণতন্ত্র নিশ্চিতে অন্তরায়। ডিজিটাল বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের ফলে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’-এর চর্চা হচ্ছে, সাংবাদিকেরা হুমকি ও হত্যার শিকার হয়েছেন। শত বছরের পুরোনো ঔপনিবেশিক আইন ও তার ধারাবাহিকতায় নতুন আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বাক্ ও চিন্তার স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো–অর্ডিনেটর জাফর সাদিক।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থার সম্ভাবনা নিয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। “আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র”- এর অন্তর্নিহিত এজেন্ডা হলো কখনোই গণতন্ত্র নয়। জনমুখী উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হলে আগে চাই গণতন্ত্র। বিশেষ করে বাক্স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। তাহলেই উন্নয়ন অর্থবহ হবে। গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য।’
সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘আগে সংবাদ রাজনৈতিক দল বা নেতার বিপক্ষে গেলে সাংবাদিকের ওপর চাপ সৃষ্টি হতো। আর এখন কোনো সংবাদ ব্যবসায়ী, আমলা বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গেলে সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও ঘটে। সাংবাদিকেরা দুর্নীতিকে উন্মোচন করেন বলেই তাদের ওপর চাপ বেশি থাকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের মনোভাব শূন্য সহনশীলতা থেকে ক্রমান্বয়ে “সহনশীল” হয়েছে এবং এখন তা এক প্রকার খোলাখুলিভাবে “প্রশ্রয়” দেওয়া হচ্ছে।’
আলোচনা শেষে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এবার আঞ্চলিক সংবাদপত্র বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন চট্টগ্রামের একুশে ডটকমের প্রধান প্রতিবেদক শরীফুল ইসলাম, জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে দৈনিক কালের কণ্ঠের সাভার প্রতিনিধি জাহিদ হাসান, টেলিভিশন বিভাগে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মিসবাহ। এ ছাড়া টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘তালাশ’। বিজয়ীদের প্রত্যেককে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।