জুলাইয়ে গণহত্যা এবং গণবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ পাওয়া যাবে, বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারের তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। সেই সঙ্গে বাংলা একাডেমির সংস্কারে অংশীজনদের নিয়ে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ সময় সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর পাশে ছিলেন।
আজ রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘গণহত্যা ও গণবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাবে, নিশ্চিত সেটা বাতিল করব।’
বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের মধ্যে কেউ জুলাইয়ে গণহত্যা এবং গণবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই করা হবে বলে জানান তিনি।
পুরস্কারের জন্য তালিকা প্রকাশের পর তা স্থগিত করা নিয়ে এক প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, ‘এটা আমাদের ভুল হয়েছে। আগের পদ্ধতি মেনেই কাজ করেছি। যারা যাচাই-বাছাইয়ের সঙ্গে ছিলেন তাদের দু-একটি ভুল হয়েছে। যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে পুরোপুরি সদাচরণ করা হয়নি।’
মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বাংলা একাডেমির সংস্কারে সংস্কার কমিটি গঠন করা হবে। সমাজের বুদ্ধিভিত্তিক ও সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সেখানে অন্তর্ভুক্তি থাকবে।’
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার দুই দিনের মাথায় গতকাল শনিবার তা স্থগিত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০২৪ এর জন্য মনোনীতাদের তালিকা প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এবার কোনো নারীকে মনোনীত না করা এবং মনোনীত কয়েকজনের বিগত সরকারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
পরে বাংলা একাডেমি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটির সভায় উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪’ এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। এই অবস্থায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারের পূর্বঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হলো। অনধিক তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকা পুনঃপ্রকাশ করা হবে।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের জন্য এবার কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ-গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান এবং ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদকে মনোনীত করা হয়েছিল।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘যে আজব নীতিমালা এই ধরনের উদ্ভট এবং কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয়, সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে—এই সব কিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাব এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়?’