বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ক্ষেত্রে যাত্রীদের সঙ্গে হজ এজেন্সিগুলোর লিখিত চুক্তির বিধান থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না বললেই চলে। যাত্রীদের মৌখিক চুক্তির মাধ্যমেই হজে পাঠাচ্ছে এজেন্সিগুলো। এ ব্যাপারে যাত্রীদের তরফেও তাগিদ বা সচেতনতার অভাব দেখা যায়। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। চুক্তি না থাকায় তাঁদের জন্য প্রতিকার পাওয়া কঠিন হচ্ছে।
২০২১ সালের হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন এবং ২০২২ সালের হজ ও ওমরাহ বিধিমালায় হজযাত্রী ও এজেন্সিগুলোর জন্য পালনীয় নিয়মনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, কোনো এজেন্সি হজ ও ওমরাহ যাত্রীকে চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হলে এবং নির্ধারিত আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে। আইনে এসব অপরাধের জন্য এজেন্সিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া এজেন্সির পূর্ণ বা আংশিক জামানত বাজেয়াপ্ত করা এবং নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের বিধান রাখা হয়েছে।
নেত্রকোনার সদর উপজেলার শিবপ্রসাদপুর গ্রামের সফিক আহমেদ ও আবদুল হাই এ বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। হজ এজেন্সির সঙ্গে কোনো লিখিত চুক্তি হয়েছে কি না—জানতে চাওয়া হলে সফিক আহমেদ বলেন, একজন প্রতিবেশীর মুখে এজেন্সির দেওয়া সুযোগ-সুবিধা শুনে অধিকাংশ টাকা জমা দিয়েছেন। কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি। আবদুল হাই বলেন, তাঁর সঙ্গেও এজেন্সির কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি। চুক্তির বিষয়টি তিনিসহ অন্যরা জানেনই না বলে জানান।
হজ এজেন্সি মেসার্স আবাবিল ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাইনুদ্দিন আহমেদ এ বছর ৭০ জন হজযাত্রী সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, কোনো হজযাত্রীর সঙ্গেই লিখিত চুক্তি হয়নি। সব এজেন্সিই মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে হজযাত্রী পাঠায়।
হজযাত্রী ও এজেন্সিগুলোকে যেসব নিয়ম মানতে হবে, তার মধ্যে চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। হজ এজেন্সি তাদের ঘোষিত প্যাকেজ অনুসারে প্রত্যেক হজযাত্রীর সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবে। সেই চুক্তিপত্রের কপি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিচালক হজ অফিসে জমা দিতে হবে। চুক্তি সম্পাদন না হওয়া পর্যন্ত এজেন্সি হজে গমনের জন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাক্-নিবন্ধন ছাড়া কোনো টাকা নিতে পারবে না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন প্যাকেজে যে সেবাগুলো দেওয়া হয়, এজেন্সির প্রদত্ত সেবা কোনোভাবেই তার চেয়ে কম হবে না। এজেন্সি হজযাত্রী নিবন্ধন থেকে শুরু করে তাঁদের সৌদি আরব পাঠানো, সেখানে প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং দেশে ফেরাসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে। প্যাকেজে নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে যাত্রীর নিবন্ধন করতে হবে। হজের টাকা এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে জমা করতে হবে।
বিধিতে বলা হয়েছে, এজেন্সিগুলো প্রদেয় সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে হজযাত্রীদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করবে। চুক্তি এজেন্সির ওয়েব পেজে আপলোড করতে হবে। হজযাত্রী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা সহজেই দেখতে পান এমন দৃশ্যমান স্থানে চুক্তির কপি রাখতে হবে।
বিধান অনুযায়ী, হজ এজেন্সির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবে যাওয়া-আসার বিমান টিকিটের ব্যবস্থা করা, হাজিদের মক্কার কাবাশরিফ ও মদিনার মসজিদে নববীর যৌক্তিক .0দূরত্বে রাখা ও আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, টয়লেটের সুব্যবস্থাসহ বাসাভাড়া করা, মিনায় ভালোভাবে তাঁবুতে থাকা-খাওয়া ও কোরবানির ব্যবস্থা করা এবং হাজিদের নির্ধারিত সময়ে দেশে ফিরিয়ে আনা। অসুস্থ হজযাত্রীকে প্রয়োজনে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতি ৪৪ জন হজযাত্রীর জন্য একজন গাইড থাকবেন।
হজযাত্রীদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি না করার প্রবণতার বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিজ অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেকের সঙ্গেই লিখিত চুক্তি হয়। তবে বর্তমানে অধিকাংশ হাজিই গ্রামের। তাঁদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি কম হচ্ছে।’
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সৌদি আরব সরকার থেকে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পাঠানোর অনুমোদন পেয়েছে। নিবন্ধন করেছেন মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন, যার সিংহভাগই বেসরকারি এজেন্সির হজযাত্রী।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মো. মতিউল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত চুক্তির বিষয়টি মেনে চলতে হজযাত্রী ও এজেন্সির মালিকদের পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। হজযাত্রীরা আগ্রহী বা ইচ্ছুক হলে এজেন্সিমালিকেরা চুক্তি করবেন।’