সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করার মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ তারেক এজাজ এ রায় দেন।
এই মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। সজীব ওয়াজেদ জয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা।
মাহমুদের রহমানের আপিলের রায়ে আদালত বলেছেন, আপিলটি মঞ্জুর করা হলো। একই সঙ্গে নিম্ন আদালতের সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করা হলো।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি মাহমুদুর রহমানের পক্ষে করা আপিল শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন জানান, আপিল মঞ্জুর করে আদালত মাহমুদুর রহমানকে খালাস দিয়েছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মাহমুদুর রহমান। ওইদিন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গত বছরের ৩ অক্টোবর মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন মাহমুদুর রহমান। ওইদিন আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদালত মাহমুদুর রহমানকে জামিন দেন।
মাহমুদুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় তিনি এই মামলায় পলাতক হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত হন। ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর।
সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন—বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ–সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তাঁর ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
দণ্ডবিধির দুটি ধারায় একটিতে পাঁচ বছর এবং অপরটিতে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে প্রত্যেককে আরও তিন মাসের কারা ভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। রায় ঘোষণার সময় সবাই ‘পলাতক’ ছিলেন।
মামলায় অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ–সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলা করেন।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেন। তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন এবং বিএনপির নেতৃস্থানীয় কয়েকজন তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। তিনি বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কাছ থেকে (ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস) থেকে জানতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই–এর একজন সদস্যকে শফিক রহমান, মাহমুদুর রহমান, মামুন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এবং বিএনপির আরেক নেতা মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ ওরফে সিজারের মাধ্যমে ঘুষ দেন।
তিনি আরও জানতে পারেন, এফবিআই–এর ওই সদস্যকে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন সিজার। সজীব ওয়াজেদ জয়ের গতিবিধি লক্ষ্য রাখা এবং প্রতিটি মুহূর্তের খবরাখবর দেওয়ার জন্য এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়া হয়। জয় যত দিন থাকবেন তত দিন প্রতি মাসে আরও ৩০ হাজার ডলার করে ঘুষ দেওয়ার চুক্তিও হয়েছিল ওই এফবিআই সদস্যের সঙ্গে।
জয় আরও দাবি করেন, এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র মামলা হয়। ওই মামলায় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও এফবিআই এক সদস্যকে সাজা দেওয়া হয়।
এসব ঘটনার পরে বাংলাদেশে এই মামলা করা হয় তখন দাবি করা হয়েছিল। এই মামলা হওয়ার পর সাংবাদিক শফিক রেহমানের ইস্কাটনের বাসা থেকে এই হত্যার ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু আলামত উদ্ধার হয় বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। বিচার চলাকালে এই মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।