মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের পর এবার পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী। নেপালের স্থানীয় সময় আজ ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার পর্বতচূড়াটি জয় করেন তিনি।
এই অভিযানের পরিচালক প্রতিষ্ঠান স্নোয়ি হরাইজনের স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ বান্ডারি এবং বেসক্যাম্পের ধর্মা তামাংয়ের দেওয়া তথ্যের বরাতে বাবর আলীর লোৎসে জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এই অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান। এভারেস্টের মতো এই সামিটেও বাবরের সঙ্গে ছিলেন তাঁর শেরপা সাথি বীর বাহাদুর তামাং।
এটিই প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি পর্বতারোহীর মাউন্ট লোৎসে শিখর স্পর্শ করার ঘটনা বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাবর আলীর প্রতিষ্ঠান ভার্টিকেল ড্রিমারস। মূলত বাবর আলীর এই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্টের পাশাপাশি মাউন্ট লোৎসের শীর্ষে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই এপ্রিলের শুরুতে ছেড়েছিলেন দেশ। বাংলাদেশের পর্বতারোহীরা এর আগে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলেও একই অভিযানে দুটি ৮ হাজারি পর্বত কোনো বাংলাদেশি সামিট করেননি। সে হিসেবে এটি বাবর আলীর এক অনন্য অর্জন।
এর আগে গত রোববার ১৯ মে নেপালের সময় সকাল সাড়ে ৮টায় বাবর আলী পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান।
ফরহান জামান বলেন, ‘লোৎসে সামিটের পর বাবর রেডিওতে সামিটের সংবাদ পাঠান বেসক্যাম্পে। বেসক্যাম্পের দায়িত্বশীলেরা ওই খুশির খবর পৌঁছে দেন আমাদের কাছে।’
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন এপ্রিলের ১ তারিখে। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে তিন দিন পরই (৪ এপ্রিল) কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর লুকলাতে। সেই লুকলা থেকে পথচলা শুরু করে শত কিংবদন্তি পর্বতারোহীর চলা পথে ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্ট বেসক্যাম্পে। এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। কিন্তু কয়েক দিন অপেক্ষার পরও নেপালের দায়িত্বরত দল পথ তৈরি করতে পারেনি। তাই বাবর বিকল্প বেছে নেন, ১৬ এপ্রিল সামিট করেন ২০ হাজার ৭৫ ফুট উচ্চতার লবুচে ইস্ট পর্বত।
এরপর আবারও বেসক্যাম্পে ফিরে পর্বতের নিচ অংশের পথ খুলে গেলে ২৬ এপ্রিল বেসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত ঘুরে এসে শেষ করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ অপেক্ষা। শুভাকাঙ্ক্ষী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশের কাছ থেকে পাওয়া গেল ১৯ থাকবে ২১ এপ্রিল থাকবে চূড়ার পরিবেশ কিছুটা শান্ত। এর পরই ১৪ এপ্রিল মাঝরাতে বেসক্যাম্প থেকে শুরু হয় বাবরের স্বপ্নের পথে যাত্রা। প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে আসেন ক্যাম্প-২ এ, যার উচ্চতা ২১ হাজার ৩০০ ফুট। পরিকল্পনা অনুসারে সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর ১৮ মে উঠে আসেন ২৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতার ক্যাম্প-৩-এ এবং ১৯ মে আসেন ক্যাম্প-৪-এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ডেথ জোন। অবশেষে ১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা এবং ভোরের প্রথম কিরণে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে উড়িয়ে দেন বাংলাদেশের পতাকা।
বাবর আলীর পরিচয়
বাবরের জন্ম চট্টগ্রামে। পড়ালেখা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। তিনি একজন চিকিৎসক। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী ও লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও আগের অভিযানের সময় ছুটি না মেলায় ত্যাগ করেন চাকরির মোহ।