ঈদের আগে বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড মানুষ-সৃষ্ট দুর্ঘটনা বা নাশকতা ছিল না। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এমন তথ্য জানানো হয় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন না। এতে পরিচালক মর্যাদার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ওই কর্মকর্তা সংস্থাটির যন্ত্রপাতি সংকটের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের তদন্তের বিষয়ে কমিটির সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তের কথা জানতে চান। নাশকতা নিয়ে কথা উঠেছে উল্লেখ করেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি সংসদীয় কমিটিকে বলেন, ‘আমরা এখনো চূড়ান্ত না। আমাদের তদন্ত চলছে। এই পর্যন্ত যতটুকু তথ্য পেয়েছি, তাতে নিশ্চিত হয়েছি এই অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই হয়েছে। লোক মারফত আগুন লাগানো হয়েছে এ রকম কোনো আলামত আমরা পায়নি।’
কমিটির সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওরা (ফায়ার সার্ভিস) বলেছে এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমাদের তদন্তাধীন আছে। তারা আশঙ্কা করছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
বৈঠকে ফায়ার সার্ভিস পক্ষে থেকে বলা হয়, তাদের লোকবল থাকলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, গাড়ি নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধারকাজে যেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এ সময় কমিটির পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কী কী প্রয়োজন সেই তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কমিটির সুপারিশ পাঠাতে বলা হয় বলে জানা গেছে। কমিটি বলেছে ফায়ার সার্ভিসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদয় আছে। এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব করলে তিনি কিনে দেওয়ার সুবিবেচনা করবেন।
মীর মোস্তাক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ফায়ার সার্ভিসকে পরিপূর্ণ আধুনিক করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে ভয়াবহ কোনো ঘটনা ঘটলে তারা মোকাবিলা করতে পারে।’
সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে আসন্ন কালবৈশাখী ও ঝড় মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির কার্যক্রম গ্রহণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, ভবন ধস ও সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা রোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
মীর মোস্তাক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা এলে ক্ষয়ক্ষতি হলে কী কী করণীয় সেই সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি সঠিকভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তদারকি বৃদ্ধির জন্য কমিটি সুপারিশ করে। বৈঠকে অগ্নিকাণ্ডের বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে রেডিও, টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধি এবং দুর্ঘটনা মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সরবরাহের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও কানিজ সুলতানা।