র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত শ’তিনেক আলোচিত-সমালোচিত অভিযান পরিচালনা করেছেন। আধা পাকা আম, মাছ, শিশুখাদ্য, নকল প্রসাধনী থেকে ক্যাসিনো অভিযান। সবশেষ হাজী সেলিম পুত্র ইরফানের বাসায় সেই আলোচিত অভিযানেও নেতৃত্ব দেন মো. সারওয়ার আলম।
বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব। ফেসবুকে করা মন্তব্যের কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কার করা হয়েছে তাঁকে। গত বছরের মার্চে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার পরে ক্ষোভ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার কথা উল্লেখ করে সারওয়ার আলমকে এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত ২১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সারওয়ার আলমকে লঘুদণ্ড দেওয়ার সরকারি আদেশে স্বাক্ষর করা হয়। ওই দিন বৃহস্পতিবার থাকায় তা সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয় ২৪ এপ্রিল। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ৮ মার্চ সারওয়ার আলম নিজের ফেসবুক আইডিতে ‘চাকরিজীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাঁদের বেশির ভাগ চাকরিজীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেন।
একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমে তিনি অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করেছেন। এতে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এরপর এ বিষয়ে তদন্ত হয়।
২৭ তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম চাকরিতে যোগ দেন ২০০৮ সালের নভেম্বরে। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর ফেসবুক আইডিতে সেই স্ট্যাটাসটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেই তদন্ত কমিটি সারওয়ার আলমের স্ট্যাটাসে নির্দিষ্ট করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এমন কোনো যুক্তি কিংবা সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। সবশেষ গত এপ্রিলের মাঝামাঝি দ্বিতীয়বারের মতো দণ্ড দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই বলে প্রতিবেদন জমা দেয় সেই কমিটি। তা সত্ত্বেও এপ্রিলের শেষে লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট অন্তত দুজন কর্মকর্তা।
গত বছরের ৭ মার্চ সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে ৩৫৮ জনকে পদোন্নতি দেয় সরকার। কর্মকর্তার মধ্যে ৩৩৭ জনকে পদোন্নতি দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল বিসিএসের ২৭ তম ব্যাচ। এ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৪০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু বঞ্চিত হন র্যাবের সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম।