মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে পদাধিকারবলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার চেয়ারম্যান এবং সচিবকে সদস্য পদে নিয়োগসংক্রান্ত আইনের বিধান কেন বাতিল করতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এসংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। সেই সঙ্গে রিট আবেদনকারী বগুড়ার গাবতলীর নওয়াব আলী মণ্ডলের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিলসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে তাঁর ভাতা অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম। তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০২২ সালের আইন দ্বারা গঠিত একটি পৃথক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এই আইনের ৫(১) (ক) ও ৫ (১) (খ) ধারা অনুসারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব পদাধিকার বলে জামুকার চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর মন্ত্রণালয়ে যদি প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা পদাধিকারবলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জামুকা আইন ২০-এর ৬ ধারা অনুসারে জামুকার অন্যতম প্রধান কাজ হলো গেজেটভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় মর্মে তদন্তে এলে তাঁর গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবর সুপারিশ করা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা।
তৌফিক ইনাম আরও বলেন, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও সচিব একই সঙ্গে জামুকার সর্বোচ্চ পদে আসীন। এর ফলে তাঁরা জামুকার নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ প্রদান করেন, মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব হিসেবে সেটাই ‘মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে প্রকাশ করেন। এ ছড়া জামুকা যখন একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবর সুপারিশ করে, মন্ত্রণালয় গেজেট বাতিলের আগে তাঁকে কোনো ধরনের অভিযোগ খণ্ডানোর বা শুনানির সুযোগও দেয় না। শুধু জামুকার সুপারিশ মোতাবেক গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে কারণে প্রকৃত অর্থে জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর তদন্তকারী ও বিচারক একই ব্যক্তি। এটা প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থী।
২০০৫ সালে নওয়াব আলী মণ্ডলকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করা হয় এবং ওই বছরই তাঁর নাম গেজেটভুক্ত হয়। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত সম্মানী ভাতাও পেয়ে আসছিলেন। তবে গত বছরের ১৮ অক্টোবর জামুকার ৮১তম সভায় তাঁর গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ অনুসারে মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন, ভাতা বন্ধ, জামুকার চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে মন্ত্রী ও সচিবের নিয়োগসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন নওয়াব আলী।