নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেশে মৌলবাদের অর্থনীতি শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। আজ সোমবার জাতীয় সংসদে কপিরাইট বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে শামীম হায়দার এ কথা বলেন।
শামীম হায়দার বলেন, ‘উদারতন্ত্রের অর্থনীতি বাংলাদেশে দেখছি না, দেশে এখন মৌলবাদের অর্থনীতি শক্তিশালী। ১৫ বছর এ সরকার ক্ষমতায় আছে কিন্তু সাংস্কৃতিক বিপ্লব দেখলাম না। ঢাকা শহরের একটা অংশ কালচারাল হেরিটেজ হওয়ার কথা ছিল, কালচারাল ক্যাপিটাল হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে সংস্কৃতির জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। কালচারাল বিপ্লবের জন্য বরাদ্দ নেই। এর দায়ভার একসময় বাংলাদেশকে, এ সরকারকে নিতে হবে।’
সিনেমা হারিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা আসছে না এমন মন্তব্য করে শামীম হায়দার বলেন, এক্ষেত্রে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রক্ষাকর্তা হিসাবে আভিভূত হয়েছে। সেখানে মানসম্পন্ন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, নাটক হচ্ছে। কিছু সমালোচনা আছে, অশ্লীলতা আছে, নিয়ন্ত্রণের কিছু প্রয়োজন আছে। কিন্তু সাবলীলভাবে তারা একের পর এক সিরিজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বিভিন্ন সংস্থা করছে। এগুলোর কারণে সৃজনশীলতা লোপ পেতে পারে। সিনেমা বানানোর সময় যদি মাথায় থাকে সেন্সর বোর্ড এ জিনিসগুলো করবে, তখন সৃজনশীলতা থাকে না। এতে মানুষের চিন্তার খোরাক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সিনেমা কি হয়েছে, যা পুরো পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে?
বাংলাদেশে গণহারে পাইরেসি হয় বলে উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ফটোকপির দোকানে দেখা যায় কারও না কারও বই অনুমতি ছাড়া কপি হচ্ছে। এর সুবিধা আছে, ছাত্ররা কম টাকায় বই পায়। তবে আন্তর্জাতিক দায় রয়ে গেছে। একটা সময় বাংলাদেশকে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে—যে এই পাইরেসির বিষয়ে সরকার কী করেছে।
বিল পাস
অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামীয় কাজের স্বত্বাধিকারীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করে জাতীয় সংসদে ‘কপিরাইট বিল, ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কপিরাইটের মেয়াদ হবে ৬০ বছর।
২০০০ সালের কপিরাইট আইন রহিত করে নতুন এই আইনটি করা হচ্ছে। আজ সোমবার সংসদে বিলটি পাসের জন্য তোলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিলের ওপর আনা বাছাই কমিটিতে প্রেরণ, জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল কর্মের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে সৃষ্ট মেধাসম্পদের আইনগত স্বীকৃতি ও সুরক্ষার জন্য কপিরাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত দুই দশকে প্রযুক্তির অসামান্য উন্নতির ফলে মেধাস্বত্বের ব্যবহার ও প্রযুক্তিনির্ভরতা বহুগুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে পাইরেসি বৃদ্ধির কারণে মেধাসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষায় বিদ্যমান কপিরাইটের অধিকতর সংশোধন করা প্রয়োজন হওয়ায় বিলটি আনা হয়েছে।
বিলে প্রকাশনা, চলচ্চিত্র, ডিজিটাল কাজ, নাটক, লোককাহিনি, শিল্পকলা এবং অডিও রেকর্ডিংয়ের মৌলিক কাজের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। বিলে অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামীয় কর্মের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘একক বা যৌথভাবে রচিত ও ছদ্মনামে প্রকাশিত কোনো কর্মের ক্ষেত্রে প্রণেতার পরিচয় প্রকাশ হওয়ার আগপর্যন্ত প্রকাশক কর্তৃক জনসাধারণ্যে প্রকাশিত প্রণেতা অথবা তাঁর আইনানুগ প্রতিনিধি।’