আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে র্যাব বিলুপ্তিতে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন যে সুপারিশ করেছিল, তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এ ছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে সংগঠনটি বলেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিরাপত্তা বাহিনী আবারও আগের মতো গ্রেপ্তার, ধরপাকড় শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি বাংলাদেশের সংস্কার নিয়ে একটি প্রতিবেদন গত সোমবার প্রকাশ করেছে তাদের ওয়েবসাইটে। ৫০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভল্যুশন: আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’। এতে বলা হয়েছে, কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পদ্ধতিগত যেসব সংস্কার দরকার, সে সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের সমালোচক যাঁরা তাঁরা যেসব আইনের মাধ্যমে নিগৃহীত হতেন, সেসব আইন বাতিল এবং আইনিপ্রক্রিয়া মেনে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। অন্তর্বর্তী সরকারের এ সংস্কারকাজে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এবং সংস্থাটি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়ার কথাও বলেছে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করছে তারা। নতুন করে এসব সুপারিশ করার জন্য তারা মানবাধিকারকর্মী, অন্তর্বর্তী সরকারে কর্মরত, সামরিক বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে এইচআরডব্লিউ।
সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশে স্থায়ী সংস্কার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আগামী জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা, যাতে এই সরকারের পরও সংস্কার হয়। এ ছাড়া দাতা দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশের পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তবে এর আগে বাহিনীগুলোর আমূল সংস্কার দরকার।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে সংগঠনটি বলেছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। এবার সাংবাদিকসহ আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। পুলিশ আবার নির্বিচারে মানুষকে আটক করছে এবং অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে গণফৌজদারি অভিযোগ করছে। এর মধ্য দিয়ে যে কাউকে গ্রেপ্তারের সুযোগ পাচ্ছে পুলিশ। এর উদাহরণ দিয়ে এইচআরডব্লিউ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মধ্যে এক হাজারের বেশি মামলা করেছে পুলিশ। হত্যা, দুর্নীতি বা অন্যান্য অপরাধের জন্য হাজার হাজার আওয়ামী নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ এমন ৪০০ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর আরেক সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারের উচিত গুমবিষয়ক জাতীয় তদন্ত কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) বিলুপ্ত করার জন্য কাজ করা। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত এ সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থাটি অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের জন্য দায়ী। র্যাবের প্রধান এ কে এম শহিদুর রহমানও সংস্থাটির গোপন আটক কেন্দ্রের কথা স্বীকার করেছেন।