গত বছরের অক্টোবরে আংশিক উদ্বোধন করা হয় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। ঘোষণা ছিল, সব কাজ শেষে আগামী অক্টোবরে যাত্রী চলাচলের জন্য পুরোদমে চালু করা হবে টার্মিনালটি। কিন্তু বিমানবন্দরটি কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়নি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এ কারণে পরিচালন ব্যয় নির্ধারণে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তিও করা যায়নি। এই অবস্থায় কবে নাগাদ টার্মিনালটি পুরোদমে চালু করা হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, আগামী অক্টোবরের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলে পুরোনো টার্মিনাল থেকে নতুন টার্মিনালে সবকিছু স্থানান্তরে অপারেশন রেডিনেন্স অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার (ওআরএটি) প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। পিপিপির ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। টার্মিনাল পরিচালনার জন্য কী প্রক্রিয়ায় কাজটি দেওয়া হবে, কত রাজস্ব আয় হবে, আয় ভাগাভাগি কীভাবে হবে, এসব নির্ধারণে পিপিপি অথরিটির ট্রানজেকশনাল অ্যাডভাইজার হিসেবে আইএফসি কাজ করছে। আইএফসি এখনো তাদের প্রতিবেদন দেয়নি। আইএফসি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে পিপিপি চুক্তি হবে।
চুক্তি হয়ে গেলে পুরোনো টার্মিনালের অনেক কার্যক্রম তৃতীয় টার্মিনালে স্থানান্তর শুরু করবে বেবিচক। এরপর বেবিচকের নিজস্ব জনবলের ট্রেনিং ও ট্রায়াল চলবে।
এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সময় প্রয়োজন।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর সাদিকুর রহমান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগামী অক্টোবরের মধ্যে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেভাবেই কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৩ শতাংশ কাজ অক্টোবরের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর আমাদের নিজস্ব জনবলের ট্রেনিং হবে, তারপর ট্রায়াল দেব।’
বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘টার্মিনালটি তৃতীয় পক্ষ দিয়ে পরিচালনার নির্দেশনা আছে। এটি কীভাবে হবে, সেটির সমীক্ষা করছে আইএফসি। তারা তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। প্রতিবেদন পেলে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেভাবেই কাজটা করা হবে। এটা সিস্টেমেটিক একটি প্রক্রিয়া।’ হঠাৎ করে টার্মিনালের অপারেশন প্রক্রিয়াটা শুরু করা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল করতে হয়, তারপর এসওপিগুলো তৈরি করতে হয়। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের টার্মিনালে জায়গা দিতে হয়। তারপর নিজেদের মধ্যে আবার সেই সমন্বয়টা করতে হয়।’
তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল গত ৫ এপ্রিল। তবে কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় টার্মিনাল হস্তান্তরের সময় প্রায় ৬ মাস পেছানো হয়। তখন বলা হয়েছিল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে আগামী সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে টার্মিনালটি বুঝে নেবে বেবিচক। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরই পুরোনো টার্মিনালের অনেক কার্যক্রম তৃতীয় টার্মিনালে স্থানান্তর শুরু করবে বেবিচক।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন পায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ফেজ-১। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি রোহানি বাহারিনের করা নকশায় তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিটা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং, যার নাম দেওয়া হয়েছে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম। গত ৭ অক্টোবর টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। রানওয়েতে উড়োজাহাজের অপেক্ষা কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে। পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ভবন। একসঙ্গে ১ হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। তৃতীয় টার্মিনালের মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের মধ্যে প্রথম ধাপে চালু হবে ১২টি। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টারের মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারও থাকবে।
বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে দেশি-বিদেশি ৩৬টি এয়ারলাইনস প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তৃতীয় টার্মিনালকে ঘিরে ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ দেশীয় বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোও।