কলকাতা সংবাদদাতা
কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা ভবনে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকে আরও ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত জেলার একটি আদালত।
৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে তোলা হলে বিচারপতি শুভঙ্কর বিশ্বাস ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বিচারপতি নির্দেশ অনুযায়ী, আজ শুক্রবার ২১ জুন ছিল বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে শুনানির দিন। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে গাড়ি না থাকায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জিহাদ হাওলাদারকে বিচারপতি শুভঙ্কর বিশ্বাসের এজলাসে হাজির করা হয়।
বিচারপতি শুভঙ্কর বিশ্বাস সিআইডির পক্ষের আইনজীবীর কথা শোনার পর ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে শুনানির দিন ৫ জুলাই।
বারাসাত জেলা আদালতে আইনজীবী এ জামাল বলেন, ‘জিয়াদ হাওলাদারকে আজ সশরীরে হাজিরার কথা ছিল বারাসাত জেলা কোর্টে। কিন্তু পর্যাপ্ত গাড়ির অভাবে অনেক সময় অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতি অনুসারে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারপতি আসামির সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের বক্তব্য শোনেন। সমস্ত বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।’
এর আগে ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদারকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ থেকে গ্ৰেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। জিহাদ হাওলাদারের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া থানার বারাকপুর গ্রামে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে সঞ্জীবা গার্ডেনে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই দিন বিকেলের দিকে এমপি রাজারহাটে সঞ্জীবা গার্ডেনের আবাসনে ঢোকার পর বাইরের ধকল কাটাতে বেসিনে হাত-মুখ ধুচ্ছিলেন। সেই সময়ই পেছন থেকে ক্লোরোফোম দিয়ে তাকে বেহুঁশ করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর বালিশচাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর জিহাদ কসাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপির চামড়া থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে তিনটি প্লাস্টিকের ডিস্পোজাল ক্যারিব্যাগে ভরে রাখে।
পরে সেই লাশের টুকরোগুলোকে ট্রলিব্যাগে করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড়ের কৃষ্ণমাটি ও জিরানগাছা বাগজলা খালে আলাদা আলাদা করে ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পেরেছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন। তাঁর নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন জিহাদ হাওলাদার। মূলত আক্তারুজ্জামানের নির্দেশে জিহাদসহ চারজন সংসদ সদস্য আনারকে নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন।
অভিযুক্তে জিহাদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ।), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা।), ২০১ (তথ্যপ্রমাণ লোপাট) এবং ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)—এই চার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে।