হোম > জাতীয়

শাহজালালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং

টাকা দিয়েও সেবা পায় না দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনস

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় নির্ধারিত ফি পরিশোধ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। তাদের অভিযোগ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জাম ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছাড়া ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতে নিজেদের স্টাফ নিয়োগ করে কাজ চালাতে হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোকে। এতে এয়ারলাইনসের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে টিকিটের মূল্যে।

শুধু যাত্রীসেবা নয়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দুর্বলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কার্গো পরিবহন ব্যবসাও। দেশে ৮টি কার্গো এয়ারলাইনসের কার্যক্রম থাকলেও রপ্তানিকারকেরা কার্গোর বড় একটি অংশ সড়কপথে ভারতের বিমানবন্দরগুলোয় পাঠায় প্রসেসিং ও শিপমেন্টের জন্য। এয়ারলাইনসগুলোর অভিযোগ, সেবা দিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠান বিমানের সঙ্গে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর যে সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) রয়েছে, তার বিন্দুমাত্র বাস্তবায়িত হচ্ছে না, যা সেবার জন্য এয়ারলাইনসগুলো থেকে নেওয়া ফির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। উল্টো উড়োজাহাজে মালামাল ওঠানামা করার জন্য নিজেদের উদ্যোগেই জনবল নিয়োগ নিতে হচ্ছে। এটি বিমানবন্দরে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কাও তৈরি করছে।

কাতার এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপক (কার্গো) সুহেদ আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘আমরা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করি। এ জন্য বিমানবন্দরে আমাদের ৮২ জন স্টাফ রাখতে হয়েছে। অথচ পুরো কাজটা করার কথা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার বিমানের। তারা অর্থ নিয়েও সেবা দিচ্ছে না। আমরা চাই, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হোক।’

এয়ারলাইনস অপারেটরস কমিটির (এওসি) ঢাকার চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে ক্রমেই বিদেশি এয়ারলাইনস বাড়ছে। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ফি প্রতিবেশী দেশ এমনকি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর চার্জ থেকেও অনেক বেশি। বিমানের শিফট পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। তারা পর্যাপ্ত চেক-ইন কাউন্টার, গেট, র‍্যাম্প, লোডিং স্টাফ দিতে পারছে না। এত চার্জ দেওয়ার পরও প্রতিটি বিদেশি এয়ারলাইনসকে বিমানবন্দরের নানা কাজের জন্য কমবেশি ৭০ জন করে নিজস্ব জনবল নিয়োগ করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এয়ারলাইনসগুলোর অপারেশনাল ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, টিকিটের দামের ওপর প্রভাব ফেলছে।

জানা গেছে, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ৩৬টি বিদেশি কমার্শিয়াল এয়ারলাইনস, ৮টি কার্গো এয়ারলাইনস, ৪টি দেশীয় এয়ারলাইনস, হেলিকপ্টারসহ ১৩টি এভিয়েশন প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমানবন্দরের ১ এবং ২ নম্বর টার্মিনাল সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিমানবন্দর ৯৫ লাখ যাত্রী হ্যান্ডেল করেছে। নতুন টার্মিনাল অর্থাৎ তৃতীয় টার্মিনালের ফলে যাত্রী হ্যান্ডেলের সক্ষমতা দুই কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। এ ছাড়া কার্গো সক্ষমতা ২ লাখ টন থেকে বেড়ে ৫ লাখ টন হবে।

ভবিষ্যতের এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩-এর অপারেশন একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তির মাধ্যমে জাপানি কনসোর্টিয়ামের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। টার্মিনাল অপারেশনের একটি বড় অংশ হলো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং। চুক্তি অনুযায়ী, জাপানি কনসোর্টিয়াম নির্ধারণ করবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাদের মাধ্যমে করা হবে। যদিও সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জিম্মায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দুই বছরের জন্য ন্যস্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, সম্প্রতি বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান এবং তা যৌক্তিক। তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে বর্তমান একচেটিয়া ব্যবস্থা ভেঙে একাধিক কোম্পানিকে সুযোগ দিলে সেবা উন্নত হবে এবং দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বিমানকেও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যোগ্য বিবেচনায় দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

এর আগে তৃতীয় টার্মিনালের সার্বিক সেবা বিশ্লেষণ করতে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনকে (আইএফসি) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আইএফসি তাদের প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে, টার্মিনাল-৩-এর আকার এবং গুরুত্বের কারণে ন্যূনতম দুটি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানি থাকা উচিত। বিমানের (জাতীয় এয়ারলাইনস হিসেবে) একটি বড় অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে থাকলেও দ্বিতীয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানি হওয়া উচিত; যার পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় টার্মিনাল-৩-এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথিতযশা কোম্পানি ডি-নাটা (সংযুক্ত আরব আমিরাত), সুইসপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল (সুইজারল্যান্ড), মেনজিস এভিয়েশন (যুক্তরাজ্য) এবং সেলেবির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বেবিচক।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আইএফসির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডি-নাটা, সুইসপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং মেনজিস এভিয়েশন টার্মিনাল-৩-এ কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে মেনজিস এভিয়েশন ইউকে বেবিচকের কাছে বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে। অন্যদিকে সুইসপোর্টও বেবিচকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। উভয় প্রতিষ্ঠানই দ্রুততম সময়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিতে প্রস্তুত থাকার বিষয়টি বেবিচক কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেছে।

এদিকে টার্মিনাল-১ এবং ২-এ বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা দেখে টার্মিনাল-৩-এর হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে, সেটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাঁরা মনে করেন, সেবায় প্রতিযোগিতা সৃষ্টি এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ জরুরি। বর্তমান মনোপলি ব্যবস্থার পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দক্ষ অপারেটর নিয়োগ দিলে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে, যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বিমানের সেবার মানও বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম জানান, বিশ্বের কোথাও কোনো একটি সংস্থা এককভাবে বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে না। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে বিমান। এ বিষয়ে সেবা দিতে গিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এখন তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এটা তারা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে, তা বলা যায় না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস) হায়াত-উদ-দৌলা খান জানান, ‘টার্মিনাল-৩ চালু হলে একসঙ্গে ২০টি উড়োজাহাজ পরিচালনা করতে ৩ হাজার ৮৭৮ জনবল লাগবে। তবে বর্তমান জনবল রয়েছে ২ হাজার ৪৯৪ জন। আরও ১ হাজার ৩৮৪ জনকে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সিভিল এভিয়েশন আমাদের নিয়মিত মনিটরিং করছে। আমরা ডিটেইল অ্যাকশন প্ল্যান দিয়েছি। আশা করছি থার্ড টার্মিনালে আমরা সবাইকে কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস দিতে পারব।’

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘এত দিন বিমানের যে সার্ভিসটা পেয়ে আসছি, সেটা যে লেভেলের হওয়া উচিত ছিল, সেই লেভেলের না। আমরা এসব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিনই আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বা নিতে হবে, সেগুলো আমরা আলোচনা করছি। টার্মিনাল-৩-এ যদি বিমানের সক্ষমতার অভাব হয়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে তাদের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।’

লিবিয়ায় ভূমধ্যসাগর উপকূলে কয়েকজন অভিবাসীর লাশ, বাংলাদেশি থাকার আশঙ্কা

বদলি ঠেকাতে আদালতে মাদক নিয়ন্ত্রণের এডি

অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে টাস্কফোর্স

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ভাবনা

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চাপে আছে সরকার: আইসিজির প্রতিবেদন

প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহির জন্য আস্থা ভোটের সুপারিশ

জনগণের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব: পরিবেশ উপদেষ্টা

নারী সাংবাদিককে প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়ে যা বলল ধর্ম মন্ত্রণালয়

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা: গ্রেপ্তার নিয়ে পুলিশের অসহযোগিতায় ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ

বাংলাদেশে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি জাপানের

সেকশন