এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটিকে ২৩ নাবিকসহ সোমালিয়ার উপকূলে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় কাছাকাছি আরেক স্থানে সরিয়ে নিয়েছে জলদস্যুরা। এরপর থেকে তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। জিম্মি নাবিকদের পক্ষ থেকেও আজ শনিবার সারা দিন কোনো বার্তা আসেনি।
বাংলাদেশে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, ভারতীয় নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজ ও হেলিকপ্টার দিয়ে পিছু নেওয়ার কারণে দস্যুরা স্থির হতে পারছে না। আর এ কারণে মুক্তিপণ নিয়েও কোনো দেনদরবারের আসছে না তারা।
এদিকে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের মালিক কর্তৃপক্ষ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিং আন্তর্জাতিক লবিস্টদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে আলাপ আলোচনা সেরে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজ পুরো দিন দস্যুদের কাছ থেকে কোনো সাড়া আসেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি।’
স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং থেকে নেওয়া ছবির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে জানিয়েছিলেন, জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালি জলদস্যুদের কবজায় গেছে পাঁচ দিন হলো। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাত ৮টার দিকে সোমালিয়ার গ্যারাকাদ উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল (১ নটিক্যাল মাইল সমান ১ দশমিক ৮৫২ কিলোমিটার) দূরে দস্যুরা জাহাজটি নোঙর করে। পরে নোঙর তুলে শুক্রবার (১৫ মার্চ) উপকূল থেকে ৪৫ থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উত্তর দিকে অবস্থান নেয়। উপকূলবর্তী গদবজিরান নামক স্থান থেকে মাত্র ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে বর্তমানে জাহাজটির অবস্থান।
দস্যুরা নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করতে এ ধরনের স্থান পরিবর্তন করছে বলেও জানান তিনি। তবে সর্বশেষ অবস্থান পরিবর্তনের ব্যাপারে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে এসআর শিপিংয়ের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম জানান, জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে নাবিকেরা সুস্থ আছেন। সর্বশেষ তথ্যমতে, জলদস্যুরা নাবিকদের নিজ নিজ কেবিনে থাকার সুযোগ দিয়েছে। সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জানান, সোমালি দস্যুরা এখনো স্থির হতে পারছে না। কারণ ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের পিছু নিয়েছে। ২৩ নাবিকের সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন বলেও জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে সোমালি দস্যুদের কবজায় থাকা নাবিকদের আত্মীয়স্বজনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছেই। প্রথম দিন থেকে দৈনিকই নাবিকেরা জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের সঙ্গে নানাভাবে বার্তা পাঠাতেন। কিন্তু আজ সারা দিন কোনো বার্তা আসেনি।
জিম্মি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিককে নিজ নিজ কেবিনে থাকার সুযোগ দিয়েছে সোমালি জলদস্যুরা। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে দস্যুদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পৌঁছানোর পর এ সুযোগ দেয় তারা। আজ শনিবার পর্যন্ত সোমালিয়ার জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করেনি। এ ব্যাপারে মালিকপক্ষেরও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি তারা।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম ‘এমভি জাহান মণি’। বড় অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।
এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন: