কখনো আক্রান্তে, কখনো মৃত্যুতে রেকর্ড ছাড়াচ্ছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এখনো সেটি নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই ব্যর্থ স্থানীয় সরকার। হাসপাতালে চিকিৎসা মিললেও ধারণা ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী থাকায়, সেখানেও নানা অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮ টা-বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা) রেকর্ড নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে ডেঙ্গুতে। তারপরও মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছে স্থানীয় সরকার।
আগের দিন পর্যন্ত ৬১ জেলায় ভাইরাসটির বিস্তার থাকলেও নতুন করে আরও এক জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। নতুন আক্রান্ত জেলা রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও। এই নিয়ে চলতি বছর ৬২টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেল। আর এখন পর্যন্ত আক্রান্ত পাওয়া যায়নি শুধুমাত্র গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগের দিন রেকর্ড আক্রান্তের পর গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা) সর্বোচ্চ নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮২ জন। এতে করে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ছুঁই ছুঁই। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬১ জনে ঠেকেছে। প্রাণহানির যে হার তাতে চলতি মাসের মাঝামাঝি ২০১৯ সালের সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবের আওতায় থাকা সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিন হাজার ৬৭৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় দুই হাজার ২৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ৪০০ জন।
তবে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হলেও এখনো জনসাধারণের অসচেতনতাকেই সবচেয়ে বেশি সামনে এনে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। এসি, ছাদ বাগান, নতুন স্থাপনা বা কোথাও যেন পানি না জমে এ বিষয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে পারি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকাল মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এশিয়ার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গুর পরিস্থিতি এ সময় আগের তুলনার বেশি। এ বছর আগের তুলনায় আবহাওয়ার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি হচ্ছে, যা বেদনাদায়ক। অন্য বছরে এ সময়ে ডেঙ্গু তুলনামূলক এত বেশি থাকে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের মেয়ররাসহ মন্ত্রণালয় নিয়মিত তদারকি করছেন। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ-বরাদ্দ, জনবল, অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার জন্য যা যা করণীয় তার সব করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতার জন্য টিভিসি প্রদর্শন করা হচ্ছে।’
তবে স্থানীয় সরকারকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মশা মারার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের। সাধারণ মানুষের দায়িত্বও আছে। কিন্তু মূল কাজটি তাদের করতে হবে। এই মুহূর্তে যা খুবই জোরালো করা দরকার। একই সঙ্গে হাসপাতাল থেকে শুরু করে বাসা-বাড়িতে কোনো ডেঙ্গু রোগী যাতে মশারি ছাড়া না থাকে সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’