রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য প্রায় ১০০ কোটি ডলারের জরুরি সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ। আজ সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের ২০২৫-২৬ সালের যৌথ কর্মপরিকল্পনায় (জেআরপি) এ সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১০০টির বেশি সংস্থা একসঙ্গে কাজ করবে। জাতিসংঘ প্রথম বছরে ৯৩৪.৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তা করবে।
বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরে বসবাস করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন।
জাতিসংঘের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি সরে যাওয়ায় রোহিঙ্গাসংকট এখনো ‘অনুঘটকহীন’ অবস্থায় রয়েছে, তবে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা আগের মতোই জরুরি।
সম্প্রতি বৈশ্বিক সংকট ও আর্থিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা তহবিল হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে, জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন যখন বিদেশি সাহায্য স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। ফলে ইউএসএআইডির ৮৩ শতাংশ তহবিল বাতিল হয়ে গেছে এবং সংকট আরও গভীর হয়েছে।
জেনেভায় এ কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের সময় জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার প্রধান অ্যামি পোপ বলেন, বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘যদি আমরা সহায়তা কমিয়ে দিই, রোহিঙ্গারা না খেয়ে থাকবে, তাদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে এবং জীবন রক্ষাকারী সুবিধাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।’
অ্যামি পোপ আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করে, তাঁদের সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছি। তাই এ সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার মানে হলো অনেক মানুষের মৃত্যু।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত কিছুটা কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য অপরিহার্য। আমরা আশাবাদী, সংঘাতের অবসান হতে পারে, তাই এখন দাতাদের পিছিয়ে যাওয়া উচিত হবে না।’
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির লড়াইয়ের কারণে রাখাইনের কিছু অংশ তাঁদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান মিয়ানমারের হাতে, তবে পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক দিকে যেতে পারে।’
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাখাইনের পরিস্থিতি নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই শিবিরগুলোতে শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে।’ যেকোনো তহবিলের ঘাটতি ‘অনেককে নিরাপত্তার সন্ধানে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রার মতো মরিয়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে’ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি কক্সবাজার সফর করেছেন এবং দাতাদের আরও সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হলে রোহিঙ্গাসংকট আরও ঘনীভূত হবে, তাই দাতাদের এখনই পিছিয়ে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।