জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দিতে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘোষণাপত্রের বিষয়ে কাজ হচ্ছে। এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা হবে। সেই আলোকে ঘোষণাপত্রের খসড়া হবে।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সহকারী প্রেস সচিব আশরোফা ইমদাদ, সুচিস্মিতা তিথি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম কিছুদিনের মধ্যে। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
কবে থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনো সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত হয়নি।’
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘তাঁকে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। এটা আমাদের দায়। এতে এক ইঞ্চিও পিছপা হব না। শেখ হাসিনা যে আকাম-কুকাম করেছে, চোরতন্ত্র জারি করেছিল, গুম ও খুনের জন্য তাঁকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। হাসিনা তাঁর বাবার খুনিদের পারসু করে অনেক জায়গা থেকে ফিরিয়ে এনে বিচার করেছিলেন। তিনি তাঁর বাবার খুনিদের ফিরিয়ে আনতে যেভাবে পারসু করেছেন, আমরা তার দ্বিগুণ পারসু করে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।’
শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ভারত এখনো অবস্থান স্পষ্ট করেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে সরকার কতটুকু আশাবাদী—এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। পৃথিবীতে কেউ কোনো খুনিকে জায়গা দিতে চায় না। হাসিনার হরর স্টোরি ভারতীয় গণমাধ্যমের অনেকে জানতই না। ইদানীং অনেকে লেখা শুরু করেছেন। পুরো পৃথিবী যখন বিষয়টি জানবে, চাপটা তৈরি হবে। আমরা তাঁকে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যদি না পারি, পরে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন তাঁরা করবেন। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ছয় সাংবাদিক হত্যার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘এটা আমাদের অগ্রাধিকার। অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে।’
৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকার তদন্ত করছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘বিষয়টি সৎ তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে করাব। আগের সরকারের তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত করলে ভালো ফল পাব না।’
সাইবার সুরক্ষা আইনের বিষয়ে টিআইবির সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করি। এটা নিয়ে আসিফ নজরুল সাহেব কথা বলবেন।’
গুম কমিশন ভালো কাজ করছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘দু-একটা আয়নাঘরে আপনাদের (সাংবাদিক) পরিদর্শনের ব্যবস্থা করব। সেখানে কী ভয়াবহভাবে গুম করা হতো, সেই চিত্র দেখতে পারবেন। হাসিনার আমলে পাপাচারের শেষ নেই!’ তিনটি নির্বাচন, শাপলা চত্বরের ঘটনা, টাকা পাচারের ঘটনা উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে। হাসিনাকে আমরা বিচারের আওতায় আনব।’
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ ঘটনার বিচারের দাবিতে আমরা (সাংবাদিক) আন্দোলনে ছিলাম। এ বিষয়ে কাজ চলছে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। যে সময়টা নষ্ট হয়েছে, তা মেকআপ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করতে কাজ করছে পিবিআই। বিষয়টি নিয়ে আজকে (রোববার) পিবিআই প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। কারণ, তারা ৩০ বছর আগের খুনের তদন্তও সফলভাবে করেছে। তাই তাদের সক্ষমতা আছে। বিষয়টি কষ্টসাধ্য হলেও প্রচুর সময় দিচ্ছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
বিটিভি ও বাসসের স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিতে সরকার উদ্যোগ নেবে কি না—এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আছে। অন্যান্য দেশে এ সংস্থাগুলোর ব্যাপ্তি বড় আকারে থাকে। তাই আমরা সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বড় ও ক্ষমতাশালী করার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে বিটিভি সংবাদ পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে। তা আরও বড় করার পরিকল্পনা সরকারের আছে; যাতে দেশের সমস্ত সংবাদ মানুষ দেখতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিটিভি ও বাসসকে স্বাধীনতা দেওয়া আছে। নিজ নিজ রোল অনুযায়ী প্রেস ফ্রিডম ব্যবহার করতে পারবেন। গত পাঁচ মাসে দেশের গণমাধ্যম যতটা স্বাধীন ছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল না।’
আওয়ামী লীগের আমলের দুর্নীতির চিত্র বিএসএসের সংবাদে উঠে আসবে কি না—এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা তাদের ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করি না। আমরা আশা করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে প্রোগ্রামগুলো করবেন।’
ভারত ভিসা বন্ধ করায় বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, ‘বুলগেরিয়া ভিসা সেন্টার ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে হস্তান্তরের কথা আগেই জানিয়েছে। ১২২ জন বাংলাদেশি ছাত্রকে তারা ভিসা দিয়েছে। রোমানিয়া ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের দূতাবাস থেকে ভিসা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কাজাখস্তান জানিয়েছে, ব্যাংকক থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপিয়ান ডেস্ক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’