হোম > জাতীয়

রাজধানীর অপরাধজগতে নেতা-সন্ত্রাসীতে আঁতাত

 শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর ফার্মগেটে একটি রেস্তোরাঁয় ঝড়ের গতিতে ১০-১২ জন যুবক ঢুকে পড়লেন। একজন ম্যানেজারকে বললেন, ‘তোরে না কইছি ভাই পাঠাইছে, আজকের মধ্যেই ব্যবস্থা কর। নইলে ঢাকা ছাড়।’

কয়েক দিন আগে রাত ৯টার দিকে হুমকি দেওয়ার সময় এ প্রতিবেদক সেখানে খাবার খাচ্ছিলেন। যুবকেরা চলে যাওয়ার পর ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে বললেন, ‘কয়েক দিন ধরে তারা মালিককে খুঁজছে। বলছে, মোল্লা মাসুদ তাদের পাঠাইছে। মাসে মাসে চাঁদা চায়। খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদের কথা বলেছে।’

২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় ছিল মোল্লা মাসুদের নাম। গত ৫ আগস্টের পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, মুক্তির পর তিনি ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শুরুতে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হলেও পরে সমঝোতা হয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের সূত্র বলেছে, শুধু মোল্লা মাসুদই নন, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীর অন্তত ২৭ জন সন্ত্রাসী জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মিরপুরের কিলার আব্বাস ওরফে আব্বাস আলী, শাহাদত হোসেন, মুক্তার, শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগের সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা সন্ত্রাসীরা নিজেদের হারানো ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’ আবার নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্রিয় হয়েছে।

সূত্র বলেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। অনেকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আরও অবনতি ঘটছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা এবং সন্ত্রাসীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে এসব তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে আগের ‘সেভেন স্টার’ ও ‘ফাইভ স্টার’ গ্রুপের মতো জোটও করতে চাইছে।

অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকায় অপরাধ করে কোনো সন্ত্রাসী ছাড় পাবে না। তাদের সঙ্গে অন্যদের জোটও গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রিও ফ্যাশনসহ বৃহত্তর মিরপুরের একাধিক তৈরি পোশাক কারখানার ঝুটের নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব হোসেনের হাতে। তিনি মাসোহারা দিতেন সন্ত্রাসীদের। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ঝুট ব্যবসা দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হলে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেন ও মুক্তারের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্যসচিব সাজ্জাদুল মিরাজের গ্রুপের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে ২ জানুয়ারি মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের রিও ফ্যাশন ও রি ডিজাইন লিমিটেডের ঝুট নামানো নিয়ে শাহাদত, মুক্তার এবং যুবদল নেতা মিরাজের নেতৃত্বে রূপনগর থানা যুবদলের সদস্যসচিব হাদিউল ইসলাম রাজীব, পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াদের গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার প্রধান ফটকে এক পক্ষের ছোড়া ককটেলে আহত হন স্টোরকিপার। আজকের পত্রিকার হাতে আসা এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলার পর লোকজন প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করছে। পরে জনতা একজনকে আটক করে রূপনগর থানা-পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়।

রিও ফ্যাশনের মালিক হাকিম শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঝুটগুলো কারখানা থেকে বেশ দূরে ফেলা হতো। আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিয়ে যেতেন। সম্প্রতি সন্ত্রাসীরা ভাগ চাওয়ায় তা ককটেল বিস্ফোরণ পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, মিরাজ এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানীয় কয়েকজন নেতা বাহিনী গঠন করে চাঁদাবাজিসহ দখলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাজ্জাদুল মিরাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক গত মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখানে দুটি গ্রুপ চিহ্নিত হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।

এদিকে পান্থপথের পিদিম ট্রেড নামের আসবাব বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকির হোসেন তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং চাঁদা না পেয়ে ক্যাশ থেকে ২০ হাজার টাকা লুটে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন কলাবাগান থানার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ তিনি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি চক্র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা করছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চায় চক্রটি।

নিউ এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে মার্কেটের দুই ব্যবসায়ীকে ১০ জানুয়ারি কোপানোর নেপথ্যেও ছিল মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব। এ ঘটনায় নাম এসেছে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন ও ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের। মামলায়ও এ দুজনের নাম রয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি নিয়ে ইমন ও পিচ্চি হেলালের দ্বন্দ্ব। তারা যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হাতে রেখে মাঠে নেমেছে।

প্রায় দুই দশক পর কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের নামে কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, ভাসানটেক, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজের ও মালপত্র সরবরাহকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে তার সহযোগীরা। নির্মাণকাজ, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা, ঠিকাদারি, ডিশ ও ইন্টারনেটের লাইনের সংযোগ দিতেও চাঁদা দিতে হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও মোহাম্মদপুরে পিচ্চি হেলালের সহযোগীরা সক্রিয় ছিল। মুক্তি পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আবারও চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন কয়েকবার মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র বলছে, ইমন বাইরে আসার পর তার সহযোগীরা হাজারীবাগ ও আশপাশের এলাকায় অপরাধে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

ডিবির পদস্থ এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, অপরাধের ধরন বদলেছে। আগে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এককভাবে কাজ করত; এখন দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জোট বেঁধে চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে নেমেছে তারা।

অপরাধ নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা আবার পুরোনো অপরাধের নেটওয়ার্ক সচল করছে কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। তা না হলে এই দুর্বল পুলিশি ব্যবস্থার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, আদালতের মাধ্যমে যেসব সন্ত্রাসী ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে, তারা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রিভিউ শুনানি ৯ ফেব্রুয়ারি

রাজনীতিতে ঢুকতে চাই না, প্রধান উপদেষ্টার টাইমফ্রেমে কাজ করছি: সিইসি

ঢাকাকে ভারতের চোখে দেখার সম্ভাবনা কম

নবীন উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পাকিস্তান সফর, প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সরানো হলো পরিচালক মনিরুজ্জামানকে

গত বছর ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, ৬১ শতাংশই নারী: জরিপ

পাঁচ মাসে মাজার-দরগায় ৪৪ হামলা: প্রেস উইং

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৪৭ বাংলাদেশি

সেকশন