হোম > জাতীয়

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সাংবাদিকদের সংলাপ

‘না’ ভোট ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃতফসিলের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন আরএফইডির মতবিনিময়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘না’ ভোটের বিধান চালু করা ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সুপারিশ করেছেন নির্বাচন বিটের সাংবাদিকেরা। আজ শনিবার নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে মোট ৩৩টি সুপারিশ তুলে ধরেন তাঁরা। এর মধ্য দিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় শুরু হলো।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সঙ্গে সংলাপে আরএফইডির পক্ষে সুপারিশ তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর।

আরএফইডির সুপারিশগুলো হলো—

১. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের মর্যাদা মন্ত্রীর ওপরে রাখা।

২. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সংখ্যা পাঁচজন থেকে কমিয়ে তিনজন করা।

৩. প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনার একই পেশা থেকে একাধিক নিয়োগ না দেওয়া।

৪. নির্বাচনে আমলা নির্ভরতা কমাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সরকার নয়, এ পদে অবসরপ্রাপ্ত কোনো সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারের হাতে রাখা।

৫. জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সহকারী রিটার্নিং অফিসারের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া।

৬. নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনে দায়িত্বপালন করা ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া।

৭. না ভোটের বিধান পুনরায় চালু করা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে না ভোটের সংখ্যা বেশি হলে এবং ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা।

৮. সব ধরনের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করা। একাধিক প্রার্থী না থাকলে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা।

৯. প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি সহজ করা।

১০. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ সহজ করতে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের শর্ত বাতিল করা।

১১. মনোনয়ন বাণিজ্য কমাতে দল থেকে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া বিধান বাতিল করা, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে একজন মাত্র প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

১২. আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি সহায়ক হবে বলে মনে করি। আর জনগণকে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাই এই মুহূর্তে নির্বাচনী পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।

১৩. কোনো ভোটার কেন্দ্রে না গেলে তাঁর ভোটটি অন্য কেউ দিতে পারবে না, এটি নিশ্চত করার ব্যবস্থা। অর্থাৎ আমার ভোট আমি দেব, অন্যের ভোট আমি দিতে পারব না।

১৪. নির্বাচনী মাঠে গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষক সংস্থাকে অবাধে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করার সুযোগ দেওয়া, কেন্দ্রে অবাধে তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে পুলিশ একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই নির্বাচনের আগে নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এ বিষয়ে অবহিত করার ব্যবস্থা করা। যাতে তাঁরা গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করেন।

১৫. আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে যুক্ত করা।

১৬. অনলাইন ও অফলাইন উভয়ভাবে মনোনয়নপত্র দাখিলের ব্যবস্থা করা।

১৭. রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে হালনাগাদ করা।

১৮. রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের মনিটরিং করার ব্যবস্থা করা। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু জমা নয়। দলের দেওয়া তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা।

১৯. স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন থেকে দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে নির্দলীয় প্রতীকে করা।

২০. স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই অন্তত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করার ব্যবস্থা করা।

২১. অতীতে নির্বাচন কমিশনের কিছু কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন দলের দলীয়-কর্মীর ভূমিকায় দেখা গেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার ব্যবস্থা করা।

২২. নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখা। প্রয়োজনে কমিশন এ বিষয়ে সরাসরি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে নেবে।

২৩. নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সরকারের কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ না দেওয়া।

২৪. নতুন আইন বাতিল করে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা।

২৫. অনিয়মের কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এবং পরবর্তীতে ভোটগ্রহণ চালু করার পরিস্থিতি না থাকলে রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন। নির্বাচন কমিশন ওই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করায় ফলাফল নির্ধারণ করা না গেলে ওই কেন্দ্রে পুনরায় নতুনভাবে ভোটগ্রহণের নির্দেশনা দেবে।

২৬. নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে প্রিসাইডিং অফিসার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করবেন। যদি এমন হয় নির্ধারিত সময়ে পুনরায় ভোট চালু করা যাচ্ছে না, ভোটের সামগ্রী প্রিসাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বা দুর্ঘটনা বা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে এবং এতে কেন্দ্রের ফলাফল নির্ধারণ করা যাবে না। সেই ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার অবিলম্বে কমিশনকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করবেন।

২৭. কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী কাজে অবহেলা, অবজ্ঞা বা অন্য কোনো উপায়ে কমিশনের আদেশ পালনে শৈথিল্য প্রকাশ করলে বা আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে বা নির্বাচনকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে পারে এইরূপ কোনো আচরণ করলে কমিশন তাঁকে চিঠি দিয়ে তিরস্কার করতে পারবে। তিরস্কার করা ব্যক্তি পরবর্তী পাঁচ বছর পদোন্নতি পাবেন না। প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় প্রশাসন বা মাঠ প্রশাসনের কোনো দপ্তরের প্রধান পদে কর্মরত থাকলে তাকে তাৎক্ষণিক ওই পদ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং তিরস্কার দেওয়ার দিন থেকে পাঁচ বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কোনো দপ্তরের প্রধান পদে পদায়ন করা যাবে না।

২৮. আরপিও সংস্কার করে ৯১ (ক) ভিন্নরূপ কোনো বিধান না থাকলে কমিশন-যদি সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন না, তা হলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র [বা ক্ষেত্রমত, সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায়] নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।

২৯. নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সব থেকে বেশি ব্যয় হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে। তাই নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল, কলেজের স্কাউট করা ছাত্র-ছাত্রীদের নির্বাচনী কাজে যুক্ত করা।

৩০. দলগুলোর জোটের ক্ষেত্রে নিজের দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করতে হবে।

৩১. ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো।

৩২. সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা।

৩৩. ভোটের আগে নির্বাচন বন্ধ বা প্রার্থিতা বাতিল ও ফেরতের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া।

মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দলীয় প্রতীক নিয়ে আমাদের অবস্থান এখনো চূড়ান্ত করিনি। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হোক, সেটা আমরা চাই না। এ জন্য স্থানীয় সরকারের আইন পরিবর্তন করতে হবে।’ তিনি বলেন, কেবল প্রবাসীরা নন, দেশে যাঁরা অক্ষম, নারী, কর্মস্থলের কারণে এলাকার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের জন্যও ভোট দেওয়ার সুযোগ তাঁরা রাখতে চান।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ২২টি দল ও জোটের কাছে কমিশন প্রস্তাব চাইছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, এর শরিক, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য নিবন্ধিত দলের মতামত না চাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা নিয়ে তাঁরা আরেক দিন সংবাদ সম্মেলন করবেন। তিনি এ বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকের মতামত নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি সব দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে একটা সুপারিশ করতে। সরকার কমিশনগুলো গঠন করেছে। সরকার একটি কার্যপরিধি ও করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। অবশ্যই সরকারের অভিপ্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এ সময় সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ছাত্র প্রতিনিধি সাদিক আল আরমান বলেন, ‘যারা আমাদের এত ভাইকে হত্যা করল, এত মানুষকে আহত করল, সে জন্য তারা এখনো জাতির কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। আমাদের সেই ভাইদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কী আমাদের আওয়ামী লীগের মতামত নেওয়া উচিত?’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাঁদের কোনো রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নেই। তাঁরা কেবল আগামী নির্বাচনের কথা চিন্তা করছেন না। অতীতে অনেক অন্যায়, অপকর্ম হয়েছে। এগুলো যাতে ভবিষ্যতে বন্ধ হয়, নির্বাচনী ব্যবস্থা যাতে কার্যকর হয়, তার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে দীর্ঘ মেয়াদে শক্ত হয়, সেই ব্যবস্থা তাঁরা করবেন। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ, দুর্বল যন্ত্র ছিল। এগুলো অকেজো হয়ে গেছে বোধ হয়। এটার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য এবং আস্থাশীলতা দরকার। রাজনীতিবিদদেরই এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আরএফইডির সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হলো জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের সাড়া পেয়ে তাঁরা উৎসাহিত হচ্ছেন। সবার মতামত নিয়ে তাঁরা সুচিন্তিত সুপারিশ করবেন।

সভায় আরএফইডির সভাপতি একরামুল হক সায়েমসহ অন্যরাও বক্তব্য রাখেন।

নবীন উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পাকিস্তান সফর, প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সরানো হলো পরিচালক মনিরুজ্জামানকে

গত বছর ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, ৬১ শতাংশই নারী: জরিপ

পাঁচ মাসে মাজার-দরগায় ৪৪ হামলা: প্রেস উইং

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৪৭ বাংলাদেশি

বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না হুমায়ুনের

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ৬ দিন সময়

সস্তায় বিক্রি হচ্ছে শৈশব

সেকশন