নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জ্ঞাত আয় আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার ও তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেছার নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্ত্রীর নামে করা মামলাতে সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে বাহারকে। এ ছাড়া বাহারের মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনার বিরুদ্ধে পৃথক আরকটি মামলা দায়ের করেছে কমিশন।
তাঁদের মোট জ্ঞাত আয় আয়বহির্ভূত সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ টাকা।
আজ সোমবার কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মামলার বিষয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিম, সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান ও উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ জালাল বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।
বাহারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন। এ ছাড়া তাঁর ২৯টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২৫৮ কোটি ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৫ টাকা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেন।
অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ জ্ঞাতসারে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারে স্ত্রী মেহেরুন্নেছার নামে। এ মামলায় বাহারকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়—মেহেরুন্নেছা একজন গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর স্বামীর অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার অপপ্রয়াসে, নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর নথিতে প্রদর্শিত করে তাঁর স্বামীর অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারা তাঁর নিজ নামে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেন এবং ভোগদখলে রাখেন।
এ ছাড়া বাহারের মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনার নামে তৃতীয় মামলাটি দায়ের করা হয়। এজাহারের বলা হয়—তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট থাকাবস্থায় জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৩ কোটি ৪ লাখ ৫ হাজার ৭৭০ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করেন এবং ভোগদখলে রাখেন। তাঁর নামীয় ১৬টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার ১৯৩ টাকা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেন।
অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ জ্ঞাতসারে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
পৃথক তিনটি মামলা ছাড়াও বাহারের দুই মেয়ে আয়মান বাহার ও আজিজা বাহারকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারা মোতাবেক পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করার সুপারিশ করা হয়েছে। আয়মানের নামে ১ কোট ৪৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও আজিজা বাহারের নামে ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ২২২ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের উৎসসমূহের সত্যতা বা যথার্থতা যাচাই করতে এই নোটিশ জারি করা হয়।