বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এককভাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল।
আজ মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠকের পর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলীয় সভাপতিকে একক ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করি। তখন পুরো হাউস তা সমর্থন করে।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি প্রার্থী চূড়ান্ত করে ইসিতে জমা দিতে হবে।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের সরকারি দলের সভাকক্ষে রাত ৮টার পর এ সভা শুরু হয়। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা।
বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
প্রার্থীর সংখ্যা একজনের বেশি না হলে তাঁকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে বিধিমালা অনুযায়ী ভোট হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে।
২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. আবদুল হামিদ। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। ফলে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ২১ বারে মোট ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকতে পারেন। সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের শেষ প্রান্তে রয়েছেন।
সেই হিসেবে নতুন যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তিনি হবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে অষ্টাদশ ব্যক্তি।
সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একবারই সংসদের কক্ষে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ওই আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাঁদের নাম ঘোষণা করবে ইসি।
একাধিক প্রার্থী হলে ১৯ ফেব্রুয়ারি সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন সংসদ সদস্যরা।
ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।