নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলালউদ্দিন বলেছেন, ‘শিশু আইন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে শিশুরা আইনে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, সে সুযোগ আমরা দিতে পারি না।’
আজ মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এবং ইউনিসেফের যৌথ প্রকল্প ‘স্ট্রেংদেনিং অলটারনেটিভস অ্যান্ড রেস্টোরেটিভ জাস্টিস সিস্টেম ফর চিলড্রেন (এসএআরসি) প্রকল্পের’ ‘শিশু আইন, ২০১৩-এর কার্যকরী বাস্তবায়ন শীর্ষক সমন্বয় সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকার শিশু আদালত-৫-এর বিচারক মুহাম্মদ সামসুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন ইউনিসেফের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর (জাস্টিস ফর চিলড্রেন) আফসানা হক।
জেলা ও দায়রা জজ হেলালউদ্দিন বলেন, ‘শিশু আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আইনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত হলে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। গুরুতর অপরাধে জড়িত নয় এমন শিশুদের থানা থেকে জামিন দেওয়ার বিধান থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। শিশুর বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এ বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কথা সত্য, আমাদের দেশে ১৬-১৭ বছরে শিশু ম্যাচিউরড হয়। তা সত্ত্বেও যেহেতু আইনে বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সে কারণে আইনের চর্চা করতে হবে। থানার জামিন দেওয়ার এখতিয়ার থাকলেও দেওয়া হয় না।’
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আদালতের পরিবেশ শিশু আদালতের মতো না। শিশুবান্ধব বিচারব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। অপরাধের সঙ্গে শিশুরা যাতে জড়িত না হয়, সে জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিচারক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুদের কল্যাণে মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে শিশু আইনে যে ধরনের সুযোগ রয়েছে তা কেন বাস্তবায়ন করতে পারছি না, বাধা কোথায়? তা আগে চিহ্নিত করতে হবে। অপরাধী ও শিশুকে যদি আলাদা করতে না পারি তাহলে এই আইনের উদ্যোগ সফল হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘থানা থেকে আদালত পর্যন্ত শিশুদের যে সুযোগ দেওয়া উচিত তা তারা পাচ্ছে না।’
বিশেষ অতিথি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, প্রত্যেকটি কল্যাণ রাষ্ট্রে শিশু আইন থাকে। আমরা এখনো কল্যাণ রাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারিনি। তবে চেষ্টা চলছে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘আলাদা আদালত ও আলাদা বিচারক এখনো হয়নি। অথচ শিশু আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের পৃথকভাবে বিচার করতে হবে পৃথক আদালত থাকবে। শিশু আইনে আছে শিশুদের আটক করে আদালতে পাঠালে সরাসরি শিশু আদালতে পাঠাতে হবে। কিন্তু পাঠানো হয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। এতে ম্যাজিস্ট্রেটদেরও হয়রানি হতে হয়, আবার শিশুদেরও হয়রানি হতে হয়। বন্ধের দিনে শিশুদের কোন আদালতে উপস্থাপন করতে হবে, এ কথা আইনে বলা নেই।’
শিশু আইন বাস্তবায়নের বর্তমান প্রেক্ষাপট–সম্পর্কিত ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের জাস্টিস ফর চিলড্রেনের (চাইল্ড প্রোটেকশন সেকশন) ন্যাশনাল এক্সপার্ট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খোদা আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল ওয়াহাব, মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ এবং ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে আসা পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁরা শিশু আইন বাস্তবায়নের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন।