কলকাতা সংবাদদাতা
চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি কলকাতায় গিয়ে নিখোঁজ হন। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, আনার খুন হয়েছেন। তবে এখনো তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়নি। কলকাতায় আনার যে বাড়িতে উঠেছিলেন, সেটির সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৩ ও ১৫ মে সেই বাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি বড় বড় ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছেন।
সংসদ সদস্য আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ এ ঘটনার মূল হোতাকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আনারের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলছে, নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হয়েছেন বলে অনুমান, সেই ফ্ল্যাটের একটি কামরার সেন্সর লক করা আছে। ওই কামরা খুলতে পারলে খুনের আসল রহস্য জানা যেতে পারে। কামরার সেন্সর লক খোলার চেষ্টা করছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের গোয়েন্দা বিভাগ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে।
আনার গত ১২ মে কলকাতায় পৌঁছান। সেখানে তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোগী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। গোপাল জানান, পরদিন একটি গাড়িতে করে আনার বাইরে বের হন এবং বলে যান তিনি মেডিকেল চেকআপের জন্য যাচ্ছেন। এরপর আর গোপালের বাসায় ফেরেননি আনার।
গোপাল বিশ্বাস আরও জানান, দুই দিন পর তিনি এবং আনারের কন্যা একটি মেসেজ পান। সেখানে বলা হয়, আনার কাজের জন্য দিল্লিতে আছেন। এর পরের ৪৮ ঘণ্টা ধরে গোপাল ও আনারের কন্যা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পরে ১৮ মে গোপাল বিশ্বাস বড়নগর পুলিশ স্টেশনে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে ব্যারাকপুর পুলিশ একটি বিশেষ টিম গঠন করে সংসদ সদস্য আনারের খোঁজে। এরপর ২০ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সাংসদ আনারকে সম্ভবত হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিধাননগর পুলিশ জানায়, গত ১৩ কলকাতার নিউ টাউনের অ্যাকুইটিকা এলাকার একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়ির মালিক রাজ্য শুল্ক বিভাগের কর্মচারী সঞ্জীব ঘোষ। তিনি মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কাছ বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন। বুধবার সকালে বিধাননগর, ব্যারাকপুর পুলিশ ও স্পেশাল টাস্কফোর্সের সদস্যরা বাড়িটিতে যান এবং সেখানে তল্লাশি চালান। তাঁরা সেখানে রক্তের দাগ পেলেও কোনো মরদেহ দেখতে পাননি।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির মহাপরিদর্শক অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, পুলিশ এখনো মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা গেছে, গত ১৩ মে আনার এক নারী ও দুই পুরুষের সঙ্গে ওই কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেন। কিন্তু এরপর আর তাঁকে বের হতে দেখা যায়নি। ১৩ ও ১৫ মের মধ্যে ওই নারী ও দুই পুরুষকে বাড়িটি থেকে একাধিকবার বের হতে দেখা যায়। এর মধ্যে তাঁদের অন্তত দুজনকে বড় বড় ব্যাগ হাতে বের হতে দেখা যায়।